আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নির্বাচিত কোনো এমপি ওপারে (ভারত) ট্রেনিং নিয়ে এসে সরাসরি যুদ্ধ করেছে বলে আমার জানা নেই। আমিই একমাত্র ব্যক্তি, ট্রেনিং নিয়ে সরাসরি যুদ্ধ করেছি। ক্যাম্পে ফিরে ইস্টার্ন রিফাইনারি উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাকে আর্মি দেওয়ার অনুরোধ করি। তারা আমাকে জানান, আর্মি নিয়মিত যুদ্ধ করেছেন। গেরিলা যুদ্ধ করেন না। আর্মি সৈন্যরা নিয়মমাফিক সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন। আমার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিক। এমনকি মেজর জিয়াও গেরিলা যুদ্ধ করেননি। শেষে গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে আমরা ইস্টার্ন রিফাইনারি আক্রমণ করেছি। নালায় লাফ দিয়ে বেঁচে এসেছি।
গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রামবাসীর দেওয়া সংবর্ধনার জবাবে এসব কথা বলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নগরীর কাজির দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জেনারেল ওসমানী নতুন দল গঠনের ইচ্ছে পোষণ করেন। আমাকে ফোন করে তার দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমাকে তার জীবনে আর দ্বিতীয়বার ফোন না করার জন্য বলে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর অনেক কিছু হয়েছে, অনেক কিছু দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর রক্তের দাগ শুকায়নি। অনেককে খন্দকার মোশতাকের টেবিলে দেখেছি। আমি অন্তত আত্মাকে শান্তি দিতে পারব। আমি আর কায়সার চার দিনে (চেহলাম) এনায়েত বাজার মসজিদের ইমামকে ডেকে নিয়ে বাসায় বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া ও মিলাদ করেছি।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সুযোগ পাননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা সুযোগ পেয়েছেন। তিনি দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি যখন মীরসরাই শিল্পপার্কের জায়গা প্রধানমন্ত্রীকে দেখালাম, তিনি লুফে নিয়েছেন। সেই শিল্পপার্ক এখন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্পজোন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফপুত্র মীরসরাই আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেল পিতার কর্মজীবন তুলে ধরে বলেন, তিনি সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। হাজার হাজার মানুষের জন্য নীরবে কাজ করেছেন। আমি নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে মানুষের ভালোবাসা দেখেছি। জেনেছি তিনি কত বড় মাপের মানুষ। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম তার সঙ্গে দীর্ঘ ২৭ বছরের রাজনীতির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, গৌরব–সংগ্রাম ও অর্জনের ইতিহাসের মহানায়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি চট্টগ্রামের ব্র্যান্ড।
তিনি বলেন, শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়, ৭৫ পরবর্তী মানুষ যখন আওয়ামী লীগ থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছে, তখন আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও সামনে এগিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন তিনি।
নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম ও মহিউদ্দিন বাচ্চু, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য দিলোয়ারা ইউসুফ ও শামীমা হারুণ লুবনা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. মো. ইসমাইল খান, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এএসএম লুৎফুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাঈনউদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু, অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো–ভিসি ড. সেকান্দর হোসেন, শিক্ষক বেনু কুমার দে প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংবর্ধনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক।