২২ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষের স্রোত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে ছুটে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- বন্দুক, কামান, মেশিনগান কোনো কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না। এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশু-কিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। এদিকে পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকরা এক সমাবেশ এবং কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে তাতে প্রাক্তন সৈনিকরা আর প্রাক্তন হিসাবে বসে থাকতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ। আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাতে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মিলেমিশে এক সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি, তাহলে কোনোকিছুই আমরা হারাব না। বাঙালি বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আলোচনায় বসাটা ছিল সম্পূর্ণ লোক দেখানো, প্রহসন মাত্র। আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানে স্বৈরশাসকরা বাঙালিদের স্বাধীনতার সমস্ত আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার কৌশলে ব্যস্ত ছিল। এরই মধ্যে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা নির্বাচনে বাঙালি নিধনে অপারেশন সার্চ লাইটের সমস্ত পরিকল্পনা করে ফেলে। বাঙালি জাতিও যে কোনো মূল্যে মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জনে দৃঢ় শপথে বলিয়ান হয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে থাকে।