বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দুয়েকজনকে শিগগিরই দেশে আনা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

যারা স্বাধীনতা সহ্য করেনি তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে : মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ আগস্ট, ২০২২ at ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেককেই এর মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যারা বাইরে আছেন তাদের মধ্যে দুয়েকজনকে শিগগিরই দেশে আনা হবে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল, কারণ তারা ভালো করেই জানত, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যাদের ধমনীতে প্রবাহিত, তাদের কেউ বেঁচে থাকলে খুনিদের বিচার একদিন হবে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেত। তবে আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিট কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চত্বরে আয়োজিত প্রথম দিনের আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা তাদের সেই ত্যাগের প্রতিদান দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি ভাতাসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় প্রমাণ করেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা মোকাবিলা করছেন। ২১ আগস্টের বোমা হামলা আপনারা দেখেছেন, সেই দিনের হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যাকে মহান রাব্বুল আলামিন বাঁচিয়েছেন, বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু যেটা করে যেতে পারেননি, সেটা মহান রাব্বুল আলামিন বঙ্গবন্ধুর কন্যার মাধ্যমে করিয়েছেন। অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু জাতিকে সংবিধান উপহার দিয়েছেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু দেশকে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধারা একে একে হারিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আগামী ১০ বছরে ৬০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা হারিয়ে যাবেন। আমরা সারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছি, সেটা প্রমাণ করতে একটি সমাবেশ করব। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছেন। যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে তারা প্রস্তুত।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আবার বঙ্গবন্ধু কন্যার ডাকে আজকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা করছি। এই দেশ হলো হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানের দেশ। এই দেশে সবাই স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবকিছুতে সমান অধিকার পাবে। অনেকেই ইতিহাস বিকৃত করে অনেক কথা বলছেন। বঙ্গবন্ধুর নামটাও মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমরা অনেক দৃশ্য দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দৃশ্য কোনো দিন ভুলতে পারবো না। ১৫ আগস্টের কথা কোনো দিন ভুলবো না। কী অপরাধ করেছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা। এ সব কিছুর আজকে হিসাব নিকাশের সময় এসেছে। কারা এর সুবিধাভোগী? বঙ্গবন্ধুকে খুন করে খুনি-কুলাঙ্গাররা বাংলাদেশকে অন্ধকারের জগতে ডুবিয়ে দিয়েছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা ছিল তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি সমগ্র বাঙ্গালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন অসামপ্রদায়িক। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সমস্ত ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে আপনারা দেশকে ভালোবাসুন, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ শোক দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, খুনি জিয়া-মোস্তাকসহ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা সহ্য করেনি তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায় যুক্ত হয়েছিল। যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মদদ দিয়েছে তাদেরকেও খুঁজে বের করতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিএনপি-জামাত-রাজাকারেরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের শুধু বিদেশে পাঠায়নি, দূতাবাসের মাধ্যমে তাদেরকে উচ্চ পদে চাকুরি দেয়া হয়েছিল। খুনি জিয়া আইন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার কোনো শেষ নেই। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী নেতা ছিলেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই তিনি আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন। যে ব্যক্তি আজীবন দেশের স্বাধীনতা ও এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করে গেছেন তাঁেকই সপরিবারে নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। আমরা দূর্ভাগা জাতি। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই আজ ইতিহাস বিকৃত করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদেরকে সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল হতে হবে।
আরো বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম রশিদুল হক।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, মহানগর ইউনিটের সহকারী কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগরীর সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিটটের অধীন সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আজ ৬ আগস্টের কর্মসূচি : আজ ৬ আগস্ট শনিবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। প্রধান বক্তা থাকবেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজঙ্গল সলিমপুরে চসিকের নয় প্রকল্প ১২০ একর ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা মেট্রোপলিটন মালিক গ্রুপের