সচেতন মহল সম্যক অবগত আছেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সূচনাপাঠ হয়েছিল। মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশের মাটিতে পা রাখার পরের দিনই ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ নীতির ভিত্তিতে প্রণয়ন করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। এর মধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল তাৎপর্য নিহিত। এই নীতির ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধুর শাসনামল থেকে শুরু করে আজকের বাংলাদেশ বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-মেধা-অভিজ্ঞতা-দুরদর্শীতার সমন্বয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে করেছেন অতিশয় গতিময় ও মর্যাদাপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সরকার পরিচালনাকালীন সময়ে পুরোবিশ্ব পুঁজিবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক দুই ভাগে বিভক্ত থাকলেও তিনি চেয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোনো জোট নয়, বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ দেশ, হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গগুলো ছিল- আত্মমর্যাদার পররাষ্ট্রনীতি, সবার সাথে বন্ধুত্ব ও মৈত্রী, জোটনিরপেক্ষ নীতি, বিদেশী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশকে আন্তর্ভুক্তকরণের কূটনীতি, কোন রাষ্ট্রের প্রতি অতি নির্ভরশীল না হওয়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্র-মুসলিম ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, বৈদেশিক সাহায্য আদায়ের কুটনীতি, উপনিবেশবাদ-বর্ণবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান, বিশ্বের শোষিত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সমর্থন দান, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আস্থা রাখা, বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ইত্যাদি। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫ (১) অনুচ্ছেদে পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সার্বভৌম ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আইন ও জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা।’
১৯৭০ এর নির্বাচনের পূর্বে বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্র দর্শনে বলেছিলেন, ‘আজ বিশ্বজুড়ে যে ক্ষমতার লড়াই সেই লড়াইয়ে আমরা কোনো মতে জড়িয়ে পড়তে পারি না। এজন্য আমাদের অবশ্যই সত্যিকারের স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদ এবং বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত জনগণের যে সংগ্রাম চলছে সে সংগ্রামে আমরা আমাদের সমর্থন জানিয়েছি।’ ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে পৌছুনোর পর তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। লন্ডনে তিনি লেবার পার্টির নেতা হেরল্ড উইলসন, সংসদ সদস্য পিটার শোর, কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল আর্নল্ড স্মিথসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফিরার প্রাক্কালে সাইপ্রাসে যাত্রা বিরতির সময় সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি ম্যাকারিয়াস বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধিত করেন। প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনায় বঙ্গবন্ধু প্রাধন্য দিয়েছিল বাংলাদেশ গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাকে।
নিরপেক্ষতার পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সোভিয়েত রাশিয়া সফর করে এসেছি। সেখানে তাদের অকৃত্রিম আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সোভিয়েত নেতারা বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজে সার্বিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আমি ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপুঞ্জ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো এবং অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্রসমূহ যারা আমাদের দিকে সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তাদের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি জোটবহির্ভূত ও সক্রিয়। আমরা শান্তিকামী। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতিতে বিশ্বাসী এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব সৃষ্টিতে আগ্রহী। দেশ গড়ার কাজে কেউ আমাদের সাহায্য করতে চাইলে তা আমরা গ্রহণ করব কিন্তু সেই সাহায্য অবশ্যই হতে হবে নিষ্কন্টক ও শর্তহীন। আমরা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সব জাতির সমমর্যাদার নীতিতে আস্থাশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ পস্থক্ষেপ করবেনা। এটাই আমাদের কামনা।’
বঙ্গবন্ধু অনবদ্য কূটনৈতিক সাফল্যে মাত্র ৯০ দিনের মাথায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের সৈন্য প্রত্যাহার করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কোন দেশ থেকে স্বধীনতার পর এত দ্রুততর সময়ের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং সহযোগিতার নবদিগন্ত উম্মোচিত হয়। উক্ত সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব-শান্তি-সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু গঙ্গা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নদীর সুষম পানি বন্টন ও ছিটমহল হস্তান্তরের প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ১৯৭৪ সালে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল ও সীমানা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় কিছু অতিরিক্ত ভূমি ছেড়ে দেয়ার জন্য তিনি ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ ও শক্তিশালী ভূমিকার জন্য ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে ফারক্কা বাঁধ সংক্রান্ত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে ভারত ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করবে এবং বাংলাদেশ পাবে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি। যেটির উপর ভিত্তি করে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ফারাক্কার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব জেএন দীক্ষিত তার প্রকাশিত ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিওন্ড’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘শেখ মুজিব ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাইতেন; তবে তিনি এও চাইতেন যে, বিশ্বের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-কারিগরি সম্পর্ক গড়ে উঠুক, যাতে বাংলাদেশকে ভারতের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হতে হয়।’ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলতে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইডেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, নেদারল্যান্ডসহ জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডাব্লিউএফপি, আইডিএ, ইউএনএইচসিআর থেকে কোটি কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের ঋণ-সাহায্য-অর্থনৈতিক সহযোগিতা আদায়ে সক্ষম হয়েছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম সাফল্য। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার তৎপরতার সুবাদে সৌদি বাদশা ফয়সাল, লিবিয়ার গাদ্দাফিসহ অনেক দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশের প্রতি তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরবদের পক্ষ অবলম্বন এবং চিকিৎসক দল ও চা পাঠানোর ফলে মিসর বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিণত হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রভৃতি দেশ সফর করে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ঐসব দেশে বাংলাদেশের শ্রম রফতানি শুরু হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বের বিষয়েও বঙ্গবন্ধুর সচেতনতা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ কুমিল্লার দাউদকান্দির এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা- আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা কারো সঙ্গে কোনো বিবাদে লিপ্ত হতে চাই না। আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে চাই। আমাদের ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক তা আমি চাই না, আমরা অপরের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির অনবদ্য সাফল্য স্বরূপ মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষের মোট ১১৬টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ, ওআইসি, আইএমএফসহ প্রায় ৫০টি অতি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক ও দ্বৈত সহযোগিতা চুক্তি-স্মারক স্বাক্ষরিত হয় ৭০টি। প্রায় ৫০টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ শতাধিক বার বাংলাদেশ সফর করেন। বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণে অল্প সময়েই সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে সুপরিচিত লাভ করেন এবং বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে শান্তির মডেল হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্ব পরিষদের প্রেসিডেনসিয়াল কমিটির সভায় পৃথিবীর ১৪০টি দেশের শান্তি পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ‘ডিএসসিএসসি ২০২০-২০২১’ কোর্সের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে জাতির জনকের সুযোগ্য তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই নীতিমালা জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন। আর এই নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। আজ কেউই বলতে পারবে না যে, বাংলাদেশের সাথে কোনো দেশের বৈরি সম্পর্ক আছে। আমরা সবার সঙ্গেই মোটামুটি একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে চলছি। বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক ঐক্য নিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। মিয়ানমার থেকে আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরও আশ্রয় দিয়েছি। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের যে নাগরিকদের আশ্রয়দান এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, তার ব্যবস্থার জন্য আমরা কিন্তু কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি।’
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অতিসম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশের বান্দরবান সীমান্তে গোলাবারুদ নিক্ষেপ ও আকাশ পথে সামরিক যান সমূহের বিচরণ স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার দূতাবাসকে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত সামরিক সমাবেশ ও যুদ্ধাংদেহী প্রস্তুতি কোনভোবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা করে বিরোধের সাংঘর্ষিক পর্যায় এড়িয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। দেশের জন্য বড় বোঝা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়া-চীন-আমেরিকা ইত্যাদি দেশসমূহ ও মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মনোভাব বোধগম্য নয়। অধিকন্তু মিয়ানমারকে জ্বালানি তেল ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে রাশিয়ার উদ্যোগ নতুন করে নানা সংশয়ের অবতারণা করছে। সামগ্রিক বিষয় সমূহ পর্যালোচনায় এটুকুই বলা যায় যে, বাংলাদেশ সরকারকে অধিকতর কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেতা প্রকৃত অর্থেই দৃশ্যমান করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর ন্যূনতম কোন আঁচ যাতে লাগতে না পারে সেদিকে কঠোর-জোরালো মনোযোগ অতীব জরুরি।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।