বঙ্কিমচন্দ্র সেন (১৮৯২ – ১৯৬৮)। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার সাংবাদিকতার জগতে এক বিশেষ পরিচিত নাম। স্বদেশচেতনায় ও সাহিত্যানুরাগে সাংবাদিকতা ও পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ই ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ঘারিন্দা গ্রামে। পিতা জগৎচন্দ্র সেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহে কেদারনাথ মজুমদারের ‘সৌরভ’ পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তারপর একে একে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ‘নারায়ণ’ পত্রিকাতেও তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা দিয়েই শুরু করেন তাঁর কর্মজীবন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় এসে স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকার প্রুফ রিডার হিসেবে যোগদেন। এবং পরে ওই পত্রিকাতেই তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। সাংবাদিকতা তার কাছে ছিল দেশসেবা। তিনি পরবর্তীতে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘প্রফুল্লকুমারের সাধনা’ শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন– ‘আমি যখন সংবাদপত্র সেবার ব্রত গ্রহণ করি, তখন চাকরির টানে তা গ্রহণ করি নাই, দেশসেবার নেশার ঝোঁকেই এপথে পা দিয়েছিলাম।’ ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে ওই পত্রিকার সম্পাদকীয় স্তম্ভে তার লেখা ‘জেনারেল ডায়ার’ হইচই ফেলে দেয়। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক বাল্যসঙ্গী সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের অনুরোধে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র ‘আনন্দবাজারে‘ যোগ দেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকার সম্পাদক গ্রেফতার হলে তিনি কিছু দিন অস্থায়ী সম্পাদক হন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ শে নভেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ প্রকাশিত হলে ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশ পত্রিকারও সম্পাদক হন তিনি। এই সময় তিনি একসঙ্গে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় বিভাগের কাজ এবং ‘দেশ‘ পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। তিনি দীর্ঘ তেইশ বছর দেশ পত্রিকার সম্পাদনা করে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনের সমর্থনে প্রবন্ধ লেখার অপরাধে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে তিনি আধ্যাত্মিক জগতে আকৃষ্ট হয়ে সেচ্ছায় সাধনমার্গে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন। বৈষ্ণবশাস্ত্র ও ধর্ম বিষয়ে বক্তৃতায় পরিণত হন তিনি। বৈষ্ণব ধর্মের উপর কয়েকটি গ্রন্থও রচনা করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলি হল– ‘গীতামাধুরী’, ‘লোকমাতা রানী রাসমণি’, ‘জীবনমৃত্যুর সন্ধিস্থলে’, ‘নাম মাধুরী’। বঙ্কিমচন্দ্র সেন ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুন মৃত্যুবরণ করেন।