বগুড়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তার শাশুড়ি। আনোয়ার হোসেন রানা নামের ওই ব্যক্তি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং বগুড়া জেলা পরিষদ সদস্য। তিনি নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের কলেজপাড়ার সামছুল হকের ছেলে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার শ্বাশুড়ি দেলোয়ারা বেগম। এছাড়া দেলোয়ারার চার মেয়েও বগুড়া পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
দেলোয়ারার অভিযোগে তার মেয়ে ও রানার স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানাকেও আসামি করা হয়েছে। দেলোয়ারা বগুড়া সদরের কাটনারপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত শেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি অভিযোগে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরি’ পরিচালনা করছিলেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ছিলেন তার পাঁচ মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা, মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা।
অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শহরের শাকপালা ও চারমাথা এলাকায় সরিফ সিএনজি লিমিটেড নামের দুটি ফিলিং স্টেশন এবং নবাববাড়ি রোডে দেলোয়ারা–শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেটও পরিচালনা করে আসছিলেন। দেলোয়ারা জানান, শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে জামাই রানা ও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানাকে ব্যবসা দেখাশোনার মৌখিক অনুমতি দেন তিনি। কিন্তু এক পর্যায়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক চেক ও এফডিআরসহ বিভিন্ন নথিপত্রে তার স্বাক্ষর নেন রানা। এরপর তার নিজের নামীয় ব্যাংক একাউন্ট থেকে নগদ টাকাসহ এফডিআর ভাঙিয়ে প্রায় ৫০ কোটির বেশি টাকার তুলে নেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ তুলে আত্মসাত করেছেন মেয়ে ও জামাই। এরই বাইরে একই সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার নামীয় ব্যাংক হিসাব থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন তারা। আর তাদের এই কাজে সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক ও কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম (৩৮), ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান (৫০) এবং সুপার মার্কেটের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম (৫০) সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
দেলোয়ারা বেগম বলেন, রানা পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বাসার আলমারি ও সিন্দুক থেকে নগদ অর্থ, ব্যাংকের চেক, এফডিআর এবং ব্যবসায়িক সকল নথিপত্র নিয়ে কাউকে কিছু না বলে চলে যান। এসব ঘটনায় ২৪ সেপ্টেম্বর রানার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তার চার মেয়ে। তাদের অভিযোগ, রানা এখন আত্মগোপন করেছেন। আত্মগোপনে থেকেই তাদের অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
এ বিষয় জানতে রানার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। রানার রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু।