‘জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই, বই’- মনীষী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উক্তি এটি। বই যে অনন্ত যৌবনা; সভ্যতার ক্রম বিকাশে বই আজো তার আবেদন ধরে রেখেছে। বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ। যেখানে কোনো অর্থ পরিশোধ ছাড়াই পাওয়া যায় হাজার হাজার বই। শুধু সাথে করে কিছু বই নিয়ে যেতে হবে নিজেকে! ‘বই বিনিময় উৎসব’ হিসেবে নামকরণ হলেও ‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ স্লোগান দিয়ে বোঝানো হয়েছে উৎসবের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
নগরীর জামালখান মোড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বই বিনিময় উৎসব নামে ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ। সকাল ১১টায় শেঠ প্রপার্টিজ লিমিটেড নিবেদিত বই বিনিময় উৎসবের উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এবং শেঠ প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান আলম শেঠ। উৎসবের বিশেষ অতিথি ছিলেন ২১নং জামাল খান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। উদ্বোধকের বক্তব্যে সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, আমরা সব সময় চাই, মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যাক, দেশের হাল ধরুক তরুণ প্রজন্ম। তরুণরাই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যত। বই মানুষকে জ্ঞানী ও মননশীল হতে সাহায্য করে, বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ফেসবুক আসার কারণে তরুণদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা কমেছে। এ ধরনের উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে উৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম সেই সময় টাকা জমিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই কিনতাম এবং পড়তাম। একটি ভালো বই একজন মানুষের ভালো বন্ধু। বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয় না। বই কিনে সেই বই থেকে কিছু না কিছু আপনি শিখবেন। সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, আমরা সবসময় ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের সাথে থাকতে চাই। শেঠ প্রপার্টিজ এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে অতীতেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করেছি, বর্তমানেও করছি এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
ফেইন্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক সাইদ খান সাগর বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বই মননশীল জাতি গড়তে সহায়তা করবে। করোনার কারণে এবছর একুশে বই মেলা করতে দেরী হচ্ছে, তবে বই মেলায় মানুষ টাকা দিয়ে বই কিনে, আমাদের এই ভিন্নধর্মী বই বিনিময় উৎসবে একজন ব্যক্তি তার আগের পড়া বই রেখে একই ক্যাটাগরির বই আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারবেন। যেমন, কেউ যদি গল্পের বই নিয়ে আসেন, তিনি তার গল্পের বই রেখে দিয়ে আমাদের সংগ্রহকৃত বই থেকে অন্য একটি গল্পের বই বিনামূল্যে নিয়ে যেতে পারবেন। যার কারণে আমরা বলছি বই নয়, জ্ঞানের বিনিময় ঘটাচ্ছি আমরা। ৫ হাজার বই বিনিময়ের লক্ষ্য থাকছে এই আয়োজনে।
বই বিনিময়ের সংস্কৃতি বাংলাদেশে এখনও বেশ বড় পরিসরে গড়ে ওঠেনি। আমাদের কাছে এখনও বই উৎসব বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন কিংবা জেলা শহর আর মফস্বলে বইয়ের বেশ কিছু স্টলের দৃশ্য। আর বইয়ের বিনিময় বলতে আমাদের চেনা দৃশ্য হলো, স্কুল বা পাড়ার বন্ধুর সাথে তিন গোয়েন্দা, সায়েন্স ফিকশন বা জনপ্রিয় উপন্যাসের হাত বদল। আর একটু বয়স হলে কিছু বইয়ের বিনিময় হয়তো হয়, তবে তা বেশিরভাগ সময়েই প্রয়োজনে, শখ কিংবা নিয়মিত অভ্যাস হিসেবে নয়। এর বাইরে বই নিয়ে উৎসবের কোনো রেওয়াজ গড়ে উঠেনি তেমন একটা। অথচ জার্মানি, লন্ডনসহ সারা দুনিয়ায়, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও প্রায় দেখা যায়, বিশাল একেকটা সড়ক ছেয়ে গেছে বইয়ে। যে কেউ এখান থেকে বই নিয়ে যেতে পারছেন, পারছেন রেখে যেতেও। এমন নয় যে, সেসব দেশে প্রকাশনীগুলোর ব্যবসা রমরমা নয় কিংবা সেখানে বইমেলা হয় না। তাহলে এভাবে মুক্ত আয়োজনে বই বিনিময়ের কারণ কী? আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত এধরনের আয়োজনের লক্ষ্যই থাকে, জ্ঞানের বিনিময়। বই বিনিময় উৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী তরুণরা এগিয়ে আসছে এমন আয়োজন নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউবা নিয়ে আসছে নিজের সংগ্রহে থাকা রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা কিংবা হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ চরিত্র হিমু সমগ্র। বই বিনিময় উৎসবে এসে নিজের পড়া বইটি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী কিংবা শরৎ চন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র। এভাবেই হচ্ছে বই বিনিময়।












