বই পোকা ভূত

রশীদ এনাম | বুধবার , ৬ মার্চ, ২০২৪ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভূত ভূত করে চিৎকার করছে স্নেহা, ইমানা, আসফা, সুবাহানা। ক্লাস টিচার পলি ম্যাম দৌড়ে এসে বলল, ‘কী হয়েছে, তোমরা এতো চিৎকার করছো কেন ? বর্ণ বলল, ম্যাম স্নেহা নাকি ভূত দেখেছে! ‘কোথায় ভূত’ ?

ইমানা বলল, ম্যাম বইয়ের ভিতর থেকে বের হয়ে জানালা দিয়ে দৌড় দিয়েছে। আহনাফ, মুনতাহা, মাহেরা বলল,্ব ম্যাম আমরাও দেখেছি ভূতটার দুটো পাখা আছে পরীর মতো।

আনিসা বলল, ম্যাম ওরা মিথ্যা বলছে। পলি ম্যাম বলল, ‘তোমরা চুপচাপ বসো, আমি ভূতকে পাকড়াও করছি। স্নেহা বলল, ওরে বাপরে বাপ পলি ম্যামের এতো সাহস ?

পলি ম্যাম বলল, ‘শুনো তোমাদেরকে আমি বই পোকা ভূতের গল্প শোনাব’। সবাই কানাকানি করছে। বর্ণ বলল, ‘আমি আগে ব্যাগের ভিতর বইগুলো রাখি। বই পোকা ভূতে নাকি বই চিবিয়ে খাই’।

ইমানা ও আসফা বলল, ম্যাম বই পোকা ভূত কি কি খেতে ভালোবাসে? স্নেহা বলল, ম্যাম তাহলে কি ওরা সারক্ষণ বই পড়ে বেড়ায় ? বই পোকা ভূতেরা নাকি আস্ত বই গিলে ফেলে। পলি ম্যাম বলল, ‘বই পোকা ভূত নিয়ে তোমাদের মনে অনেক কৌতুহল তাই না’। সোনামনিরা! আর প্রশ্ন নয়, এবার গল্প শুরু করা যাক। তোমরা কি সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাম শুনেছো ? বর্ণ বলল, “ম্যাম আমি গিয়েছি সেন্টমার্টিন দ্বীপে”। অনেক সুন্দর নিঝুম দ্বীপ সেখানে প্রবাল, নীল রঙের জলরাশি, লাল কাঁকরা, শামুক ঝিনুক, সাম্পান, নানা রকমের সামুদ্রিক মাছ, নারিকেল বাগান, ঝাউ বন আরো কত কিনা দেখেছি। পলি ম্যাম বলল বাহ বর্ণ বেশ ভালো করেছো। শুনো সেখানে “সমুদ্র বিলাস” নামে এক বাড়ি আছে। ওই বাড়ির মালিক গল্প জাদুকর কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ।

তিনি মাঝে মাঝে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবকাশ যাপনে যেতেন। সেখানে গিয়ে তিনি প্রচুর বই পড়তেন এবং গল্প বই লিখতেন। সমুদ্র বিলাসের ছোট একটা কক্ষে একটা পাঠাগার ছিল। পাঠাগারের বুক সেলফে বই সাজানো থাকতো।

একবার পটিয়া রাহাত আলী ইশকুলের ছাত্ররা সবাই মিলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে সমুদ্র বিলাসে চড়ুইভাতির আয়োজন করল। নাচ, গান, গল্প বলা, দাবা, লুডু, রুবিসকিউভ, অঙ্ক খেলা আরও কত কিনা হলো। আনন্দশেষে সবাই সমুদ্র বিলাসের ছোট কুটিরে ঘুমাতে গেল।

গভীর রাতে ফারাজ আর জায়ান দেখতে পেল, বইয়ের সেলফ থেকে দৈত্য আকারের একটা বই হাঁটা শুরু করেছে। ভয় পেয়ে তাঁরা দুজনে কম্বলের ভিতর জবুতবু হয়ে কাঁদতে লাগল। চারিদিকে অন্ধকার নীলাভ সমুদ্রের গজর্ণ আর দৈত্য বইটার ‘বড়ো বড়ো দাঁত বের করে হা হা করা চিৎকার শুনা যাচ্ছে। সবাই গভীর ঘুমে অচেতন। তাদের কান্না কেউ শুনতে পাচ্ছে না।হঠাৎ দৈত্য বইটি বলল, ‘তোমরা সবাই আজকাল নাকি বই পড়া বাদ দিয়ে সারাক্ষণ মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকো ? মোবাইলে গেমস খেলো, টিকটক কর, ফেসবুকে সময় অপচয় করো। বই পড়া কমিয়ে দিয়েছো তাই না ? বই মেলায় ও নাকি যেতে চাও না। বুক সেলফের সাঝানো বইরা সবাই “বই পোকা” ভূত হয়ে গেছি। ম্যামের গল্প শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল।

বইপোকা ভূত বলল, যারা বই পড়ে না তাদেরকে ধরে ঘাড় মটকে দেয়। যারা বেশি বেশি বই পড়ে তাদেরকে অনেক মজার মজার বই উপহার দেয়। তোমরা সমুদ্র বিলাসে এসেছো চড়ুইভাতি খেলতে, ভালো কথা, কিন্তু তোমাদের একজনের হাতেও বই নেই কেন ? তোমরা বই পড়া বন্ধ করে দিয়েছো। একটু পরে সমুদ্র বিলাসের বোতল ভূতরাও বই পোকা ভূতের দলে যোগ দিল বোতল ভূতের শরীরে লেখা “শিশুদের হাতে মোবাইল নয় বই তুলে দিন” বই পোকা ভূত আর বোতন ভূত মিলে নেচে নেচে ওদেরকে ভয় দেখাতে লাগল। বই যারা পড়ে ওদের ঘাঢ় মটকে দিব হা হা হা ! তিমি মাছে ল্যাজ দিয়ে রামধোলাই দিব। ফারাজ কেঁদে কেঁদে বলল, ‘সরি ভুল হয়ে গেছে, এখন থেকে আমরা মোবাইল ব্যবহার করব না বই পড়ব’। বই পোকা ভূত বলল, ‘একটি ভালো বই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু চীরকালের জন্য, শুধু তাই নয় বই আলোর প্রতীক, বই আনন্দ ও মজার প্রতীক। বই পোকা ভূত হা হা হা করে চিৎকার দিয়ে বলল, ‘ আজ ক্ষমা করে দিলাম। তোমরা তোমাদের ভুল বুঝতে পেরেছো। তোমাদের ধন্যবাদ”। বোতল ভূত ফারাজকে কিছু মজার মজার বই উপহার দিল।

বোতল ভূত বলল, ‘বই পড়লে তোমরা আলোকিত হবে। তোমরা আলোকিত হলে তোমাদের দেশ আলোকিত হবে। তোমরা আগামী দিনের কাণ্ডারী। বই কিন্তু মনের দাওয়াই। মন খারাপ থাকলে বই পড়বে। বই পড়লে মনের জানালা খোলে যাবে।

হা হা হা হা হি হি করে ফারাজের মাথায় টোকা দিয়ে, দৈত্য আর বোতল ভূত বইয়ের সেলফের দিকে গিয়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। ফারাজ চিৎকার করে বিছানা থেকে নীচে পড়ে গেল, বুঝতে পারল সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। পলি ম্যামের গল্প শোনে সবাই হা হা হা হি হি করে হাসতে লাগল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুজিবের তর্জনি
পরবর্তী নিবন্ধঅ ম র ম হা কা ব্য