বই পাঠকদের জন্য অনন্য এক সুযোগ

বিভাস গুহ | শনিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করার জন্য বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। কারণ বই হচ্ছে অফুরন্ত জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞান আহরণ করতে হলে বইয়ের সাগরে ডুব দিতে হয়। বহির্বিশ্বকে জানার এ এক অপার সুযোগ। পাঠ্যপুস্তক আমরা পড়ি পরীক্ষায় ভাল মার্কস পাবার জন্য, ভাল একটা চাকরি পেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবং সমাজে একটা নিজের অবস্থান তৈরি করে সচ্ছল জীবন যাপন করতে। নিজের মনের চাহিদা পূরণ এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে জগতের যত দুঃখ কষ্ট হাসি কান্না আনন্দ বেদনার খোঁজ খবর রাখতে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে দেশ বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্যিকদের বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। জ্ঞানের সুনির্মল ধারায় নিজেকে ঋদ্ধ করতে বই পড়া। বইয়ের কালো অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও মহৎ মানুষের জীবনের কর্মপ্রবাহের সুনিপুন চিত্র। যেগুলো পড়ার মাধ্যমে নিজেকে যেমন সমৃদ্ধ যেমন করা যায় ঠিক তেমনি নিজের জীবনের গতিপথকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়। মহৎ মানুষের জীবনাচরণ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে সেপথ অনুসরণে প্রেরণা যোগায়। কবির ভাষায়- মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন/ হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়/ সে পথ লক্ষ্য করে স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে/আমরাও হব বরণীয়। মহাজ্ঞানী মহাজনদের পথ অনুসরণ করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবার চেষ্ঠা এবং সাধনার পথ আমরা বই পড়ে অর্জন করতে পারি। তাই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন সকলের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলতায় পরিপূর্ণ করতে। মানুষের জীবনে যতগুলি অভ্যাস রয়েছে তন্মধ্যে বই পড়ার অভ্যাসই হচ্ছে সর্বোত্তম অভ্যাস। এ অভ্যাস নিজেকে যেমন সমৃদ্ধ করে তেমনি আলোকিতও করে। তাই বলা হয় বই পড়ার অভ্যাস করি/আলোকিত জীবন গড়ি। বই অতীতকে যেমন কাছে নিয়ে আসে আবার বর্তমানকে চোখের সামনে তুলে ধরে। অবসর সময়কে মধুময়, আনন্দময়, সুখময় এবং লাবণ্যময় করে তোলার জন্য বই পড়া উৎকৃষ্ট একটা মাধ্যম। বই নিঃসঙ্গ জীবনের উৎকৃষ্ট সঙ্গী। প্রাত্যহিক জীবনে চলার পথে সময়ের প্রয়োজনে, চাহিদার প্রয়োজনে, স্বার্থের প্রয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে অনেকের সাথে পরিচয় ঘটে, তৈরি হয় বন্ধুত্ব। তাদের মধ্যে অনেকেই হারিয়ে যায় আবার অনেকেই স্বার্থ শেষে কেটে পড়ে কেউ কেউ হয়ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে কারো কারো সাথে ঝগড়াও হয় আর কারো কারো সংস্পর্শে হয়ত জীবন রঙিন হয়ে উঠে কিন্তু সেরকম বন্ধুর সংখ্যা বর্তমানে কম বললেই চলে। তাছাড়া প্রাত্যহিক জীবনের কর্মব্যস্ততার ভীড়ে বন্ধুও হয়ত সময় দিতে পারে না। ফলে জীবনটা একঘেঁয়েমিতে ভরে যায়। এই একঘেঁয়েমী থেকে মুক্ত করতে পারে বই। বই এমন একজন বন্ধু যে কোনদিন ব্যস্ততা দেখাবে না। নেবে না কিছুই শুধু দিয়ে যাবে অকাতরে। সমৃদ্ধ করবে নিজের মেধা ও জ্ঞানকে। আলোকিত করবে নিজের হৃদ মন্দিরকে। হৃদয়ের অন্ধকারকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে হলে বই এর সাথে মিতালি করতে হয়। দুঃখ কষ্ট হতাশা জীবনকে যখন বিষিয়ে তোলে তখন বই এর মাঝে ডুব দিয়ে দুঃখ কষ্ট হতাশার গহ্বর থেকে মুক্ত হওয়া যায়। বই পড়ে নিজেকে যেমন আলোকিত করা যায় সমাজকেও সে আলো বিতরণ করা যায়। অনেকের বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও হয়ত সামর্থ্যের অভাবে বই কিনে পড়তে পারছে না অবসর সময়ে। তাঁদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে ১০ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর “মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বই উৎসব” উপলক্ষে অগ্রিম গ্রাহক করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। প্রথম ১০০জনকে ২০০০ টাকার বই দিচ্ছে ১০২০ টাকায়। নিঃসন্দেহে বই পাঠকদের জন্য সুখবর। যাঁরা বই পাঠক কিংবা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি যাঁদের রয়েছে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রহ করুন বই। বর্তমানে বই পড়ায় সময় ব্যয় না করে অনেকে মোবাইলে সময় ব্যয় করে। সবার প্রতি বিনয়ের সাথে নিবেদন অন্তত প্রতিদিন কিছুটা সময় নিয়ম করে বই পড়ায় সময় ব্যয় করলে মনের প্রফুল্লতা যেমন বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনি মনের খোরাকটাও হবে। একজন সুন্দর মনের মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা যাবে। সুন্দর মনের মানুষ সমাজ ও দেশের অলংকার। যে অলংকারে সমাজ ও দেশকে সাজালে সমাজ ও দেশ আলোকিত হবে। তাই আসুন শৈলীর এ মহতী উদ্যোগে আমি আপনি সকলে যুক্ত হই। বই পড়ে নিজেকে আলোকিত করি। লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাছে পেরেক আটকানো বন্ধ করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধঅনুকরণীয় নিদর্শন