করোনাভাইরাস মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন আপাতত স্থগিত রাখার আবেদন করবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী গতকাল শুক্রবার রাতে বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামীকাল রোববার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানাব। বইমেলা আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন থাকবে তাতে। পাশাপাশি অনলাইনে বইমেলা আয়োজন করা যায় কি না, সেটাও আমরা বিবেচনায় রাখতে অনুরোধ করব। তবে বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।
এ সংগঠনের সভাপতি ও সময় প্রকাশনীর কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা একটি জাতীয় বিষয়। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমি কোনোভাবেই একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তার ভাষায়, মহামারীর মধ্যে বইমেলার আয়োজন করা যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি মতামত দেবে- বইমেলার আয়োজনটি করা যাবে কি যাবে না। এই মেজর ডিসিশনটা বাংলা একাডেমি একা নিতে পারে না। খবর বিডিনিউজের।
অনলাইনে বইমেলা আয়োজনের প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেন ফরিদ আহমেদ। যে কোনো প্রতিষ্ঠান এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে যে কোনো সময়ে অনলাইনে বইমেলার আয়োজন করতে পারে। কিন্তু অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন অনলাইনে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা বিকল্প হতে পারে না। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেইটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেন।
১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা আর করা যায়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা’র সূচনা হয়। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের এই বইমেলা এখন বাঙালির মননের মেলায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলার পর্দা উঠলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় চলতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। ততদিনে চীন ছাড়িয়ে করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশে পৌঁছাতে শুরু করলেও বাংলাদেশে এর প্রকোপ দেখা দেয়নি। ফলে ফেব্রুয়ারির শেষে নির্বিঘ্নেই মেলার সমাপ্তি ঘটে।