বইমেলা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় চসিক

ঢাকায় প্রস্তুতি শুরু হলেও চট্টগ্রামে নিশ্চুপ প্রকাশকরা চান মেলা হোক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

দুই সপ্তাহ পিছিয়ে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীতে অমর একুশে বইমেলা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা একাডেমি। তবে নগরে বইমেলা আয়োজন করবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর নগরে বইমেলা হয়নি। সাধারণত বাংলা একাডেমির বইমেলা শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম শহরে শুরু হয় ১০ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম ও ঢাকা দুই মেলাতেই অংশ নেয়া প্রকাশকদের সুবিধার্থে এ নয় দিনের ব্যবধান। ওই হিসেবে এবার ঢাকায় ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হলে চট্টগ্রামে ২৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্ততি নেয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।তাছাড়া অতীতে নগরে বইমেলা ফেব্রুয়ারি মাসেই শেষ হত। এবারও তেমন হলে মেলার ব্যপ্তি হবে মাত্র চারদিন। যা প্রকাশকদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এবার মেলার সময়কাল বাড়ানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন প্রকাশকগণ। তারা বলছেন, মেলা হবে কি হবে না সেটা করোনা পরিস্থতির উপর নির্ভর করলেও এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। প্রস্তুতি থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই মেলা আয়োজন করা যাবে।
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রকাশকরা চায় মেলা হোক। তবে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিধি-নিষেধ যেন না থাকে। এবার চট্টগ্রামে অন্তত ২১ দিনের মেলা হওয়া উচিত। কীভাবে এ মেলা হবে সেটা নির্ভর করছে সিটি কর্পোরেশনের উপর। আমরা মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। চলতি সপ্তাহে মিটিং করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্রুত প্রস্ততি শুরু না করলে মেলা আয়োজনে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, যদি চলতি সপ্তাহে মিটিং করে সেক্ষেত্রেও ১৫ দিনের মত প্রস্ততির সময় পাওয়া যাবে। ঢাকার প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। আশা করছি সমস্যা হবে না। এটা ঠিক মেলা হবে কি হবে না সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করলেও এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও চসিক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি তো আগের চেয়ে অবনতি হচ্ছে। সরকারও বিধি-নিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এখন আমরা যদি মেলা শুরু করি, তখন নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্ধ করে দিলে তো প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে কনফিউজড। আমরা করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিব।
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে আমাদের মিটিং করার কথা ছিল। আমাদের কিন্তু সবকিছু অর্গানাইজ করা আছে। কেবল রি-অর্গানাইজ করতে হবে। তাই মেলা আয়োজন করতে সমস্যা হবে না। সাধারণত আমরা মেলা ঢাকার পরে আয়োজন করি। তাই ঢাকার মেলাও পর্যবেক্ষণ করছি। তবে মেলা আয়োজনের খুব ইচ্ছে আছে। বাকিটা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উপর।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তৎকালীন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের প্রচেষ্টায় নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বড় পরিসরে ২০১৯ ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিন্ন বইমেলা আয়োজন করে চমক সৃষ্টি করেছিল চসিক। কুড়িয়েছিল প্রশংসাও। তাই ২০২১ সালেও লেখক এবং প্রকাশকের প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল বইমেলাকে ঘিরে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে একই বছরের ২ মার্চ বইমেলাকে ঘিরে আন্দরকিল্লাহস্থ নগর ভবনে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সেদিন ২৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০ মার্চ জেলা প্রশাসন চসিককে জানায়, ২৭ ও ২৮ মার্চ জিমনেশিয়াম মাঠে উন্নয়ন মেলা করবে। এর প্রেক্ষিতে ২১ মার্চ বইমেলা বাস্তবায়ন কমিটির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২৯ মার্চ মেলা শুরু হবে।
তবে উদ্বোধনের দুই দিন আগে ২৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেন সিটি মেয়র। সেদিন উপস্থিত প্রকাশক ও লেখকদের সঙ্গে আলোচনা করে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বইমেলার তারিখ পেছানোর ঘোষণা দেন মেয়র। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মেয়র বলেন, ‘২৩ মার্চ বইমেলা শুরুর কথা ছিল। আমরা সব আয়োজন শেষ করেছি। অনিবার্য কারণে সেটা পিছিয়েছে। দেশে দিন দিন করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। কোনো ব্যাপারে যেন বইমেলা প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে’। সবার সাথে আলোচনা শেষে মেয়র ওইদিন বলেন, ‘আমি মেলা বন্ধ করার পক্ষপাতি নই। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারিখ পিছিয়ে দেয়া যায়। মেলা নভেম্বর মাসের মাঝমাঝি থেকে বিজয় মেলার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে আয়োজন করা হবে।’ যদিও এ ঘোষণা অনুযায়ী মেলা হয়নি। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও তেমন আগ্রহ ছিল না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ ও ২০২০ সালে সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে বইমেলা বাস্তবায়ন করে। এতে সত্যিকারের বইমেলা উপহার পায় পাঠক। দূর হয় অতীতের দৈন্যতার ছাপ। পাঠকও খুঁজে পেয়েছিল তার গন্তব্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিমুকে হত্যায় নোবেলের সঙ্গে ফরহাদও ছিলেন : পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধশিশুসাহিত্যিকদের বর্ণিল একদিন