বইমেলায় ‘শিশু-কিশোর জগৎ’

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যে শিশুসাহিত্যের গোড়াপত্তন হয়েছে দুইশ বছর আগে, ১৮১৮ সালে। অবশ্য ‘শিশুসাহিত্য’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয় ১৮৯৯ সালে। শিশুর মনকে কল্পনার আনন্দে ভরিয়ে তুলেন শিশুসাহিত্যিকগণ। যদিও তা বেশ কঠিন। কারণ সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায় লিখতে হয় শিশুদের জন্য। শিশুদের জন্য লেখা হলেও এর রূপ, রস ও অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য মুগ্ধ করে বড়দেরও।
বইমেলা উপলক্ষে প্রতি বছর ছোটদের তথা শিশু-কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য গ্রন্থ বের হয়। এবারও বেরিয়েছে। তবে সব ক’টি মানোত্তীর্ণ বলা যাবে না। এবার শিশু-কিশোরদের উপযোগী প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে চট্টগ্রামের অনেক খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিকের গ্রন্থও রয়েছে। পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছে সেগুলো। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে শিশুদের ছড়া, রূপকথা, কবিতা, গল্পের পাশাপাশি কিশোর গল্প ও উপন্যাস, কিশোর রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনি, ভৌতিক উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের বই উল্লেখযোগ্য।
এবার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে শিশু-কিশোরদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে আনিসুল হকের ‘পালোয়ান ভাই’, রাশেদ রউফের ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের দুটি কিশোর উপন্যাস ‘আমার ডেঞ্জারাস মামী’ ও ‘আহা টুনটুনি উহু ছোটাচ্চু’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘অনেকগুলো ভূতের গল্প’, ওমর কায়সারের ‘সে এক আশ্চর্য বাতি’, মানজুর মুহাম্মদের ‘আমার পাখি কথা বলে’, আকতার হোসাইনের ‘ইহানের জন্য ছড়া’, বিপুল বড়ুয়ার ‘বুবুন ও পরির গল্প’, সুবর্ণা দাশ মুনমুনের কিশোর কাব্যগ্রন্থ ‘পাখির ডানায় মন’, বিভা ইন্দুর ‘ভূতের বিয়ে’, রুনা তাসমিনার শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘গাছ পাখি রোদের হাসি’, অমিত বড়ুয়ার ছড়াগ্রন্থ ‘ছুটি শেষে ভালোবেসে’, মীর নাজমিনের ‘আলোর রাজা রুবাব’, সনজীব বড়ুয়ার ‘পাহাড় নদী বন পেরিয়ে’, সুজন বড়ুয়া সম্পাদিত ‘শেখ রাসেল আমাদের ছোট রাজকুমার’, জয়া খন্দকারের ‘অদ্ভুত ভুতং’, রোমেন রায়হানের ‘যত বড় মুখ নয় তত বড় ছড়া’, রফিকুর রশীদের ‘ভূতের মেয়ের জন্মদিন’, জাকির হোসেন কামালের ‘রাখাল রাজা ও পাখপাখালির গল্প’, শান্তময় দাশের ‘খোকা ও টমির গল্প’, বাসুদেব খাস্তগীরের ‘আকাশ হতাম যদি’ ও ‘কবিতায় ইতিহাস কবিতায় মুজিব’, অরুণ শীলের ‘১০০ কিশোর কবিতা’, সনজিত দের ‘স্বপ্নমাখা ভোর’, রুনা তাসমিনার ‘টিয়া হাসে নীল আকাশে’, অমিত বড়ুয়ার ‘রোদের কণা পাখির পালক’, বিশ্বজিত বড়ুয়ার ‘গাঁয়ের পথে পালকি চলে’, আকতার হোসাইনের ‘মেঘের কি বাড়ি নাই’, সৈয়দা সেলিমা আকতারের ‘আয়রে খুকু’, কল্যাণ বড়ুয়ার ‘মেঘ রোদ্দুর বাজায় নূপুর’, মো. জয়নাল আবেদীনের ‘টুকি ও তার জাদুর কলম’, কানিজ ফাতিমার ‘বিকেল হাসে প্রজাপতি রঙে’, লিটন কুমার চৌধুরীর ‘রঙ মাখানো স্বপ্ন বুনি’ ও ‘ভালোবাসি রঙাহাসি’, দীপক বড়ুয়ার ‘জাম্বু ভূতের কাণ্ড’, সৈয়দ খালেদুল আনোয়ারের ‘মনের ছবি’, জেবারুত সাফিনার ‘ডানপিটে রোদ’, বিমল গুহের ‘টুপুর ও চরকাবুড়ি’, জুবাইর জসীমের ‘চাঁদের মুখে ঈদের হাসি’ শিপ্রা দাশের ‘অর্কের ভালোবাসা’ ও মাহফুজ রহমানের ‘কং পাহাড়ের শয়তান’।
পাখিরা কখনো মানুষকে ভালোবেসে নিজেরাই মানুষের ভাষায় কথা বলা শেখে। নিজের প্রিয় মানুষটিকে একদিন মানুষের ভাষায় কথা বলে চমকে দেয়। কিন্তু পাখির ভাষা জানা মানুষ বিরল। পাখি আর মানুষের এমন অনন্য সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে রচিত হয়েছে মানজুর মুহাম্মদের ‘আমার পাখি কথা বলে’। ফ্ল্যাপে লেখা হয়েছে, লেখকের বিশ্বাস, পাঠকের মনে গল্পগুলো পাখির সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে, দেশপ্রেম ও পাখিপ্রেম জাগরণে নিশ্চিত ভূমিকা রাখবে। পাখির জন্য পাঠকের মনে অপার ভালোবাসার জন্ম দেবে। সে ভালোবাসায় পাঠক বাংলাদেশে অবাধে পাখি নিধন বন্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে।
সুবর্ণ দাশ মুনমুনের প্রথম বই ‘পাখির ডানায় মন’ নিয়ে শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফের মূল্যায়ন হচ্ছে, গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলোতে স্বদেশবোধের চেতনা আছে, নিসর্গের চিত্রায়ন আছে, স্বপ্ন আছে, কিশোরমনের দুঃখ আর কষ্ট আছে, আছে স্বপ্নভঙ্গের কথকতা। কবিতায় কবি কখনও নরম-নীরব, কখনও বেদনাভারে আবেগবান, কখনও চঞ্চল। তাই তার কবিতায় একই সাথে অনুরণিত হয় স্মৃতির প্রীতি, আনন্দ-গীতি ও করুণগাথা।
বিপুল বড়ুয়ার কিশোর গল্পে উঠে আসে ফেলে আসা দিনগুলো। তার চারপাশের চেনা জীবন-জগৎ, পাওয়া না পাওয়ার সুখ, আকুতি কিংবা দীর্ঘশ্বাস, নস্টালজিয়া, কখনোবা গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের নানা কথা-কাহিনি। সেই জীবনঘনিষ্ঠ চেনা জানা স্থান কাল পাত্রের চালচিত্রের বিষয় আশয় নিয়ে বিপুল বড়ুয়ার কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘বুবুন ও পরির গল্প’।
জয়া খন্দকারের ‘অদ্ভুত ভুতং’ মজার বই। ফ্ল্যাপে লেখা আছে, অদ্ভুত এক ভূতের বাচ্চার নাম ভুতং। তার ইচ্ছে মানুষের কোনো বাচ্চার সঙ্গে যেন বন্ধুত্ব হয়। তাই বলে ভূত কি মানুষের বাচ্চার বন্ধু হতে পারে! এই অদ্ভুত ভুতংয়ের মানুষের জগৎ নিয়ে বেজায় কৌতূহল। একদিন ভুতংয়ের দেখা হয়ে গেল মিশুর সঙ্গে। কিন্তু মিশুর খটকা লাগে, ভূত বলে কি আসলেই কিছু আছে! ভূতেরা তো ভয় দেখায় শুনেছি। কিন্তু এ আবার কেমন ভূতের বাচ্চা, শুধু প্রশ্ন করে! টেলিস্কোপ দিয়ে কেন চাঁদ দেখতে হবে, ডারউইনের কেন এত কৌতূহল ছিল, প্রাইমেট আবার কি, মানুষেরা এল কোথা থেকে?
শান্তময় দাশের ‘খোকা ও টমির গল্প’ নিয়ে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. অনুপম সেনের মূল্যায়ন হচ্ছে, বইয়ের প্রতিটি গল্প সহজ-সরল ও শিশুদের উপযোগী, যা শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও আনন্দ যোগাবে।
সনজীব বড়ুয়ার ‘পাহাড় নদী বন পেরিয়ে’ কিশোর কবিতার বই। ফ্ল্যাপে লেখা আছে, কিশোর বয়সের স্বপ্ন আবেগ, কল্পনা, আনন্দ-বেদনা, কৌতূহল উচ্ছলতা কবিতাগুলোর প্রাণ।
প্রসঙ্গত, জিমনেশিয়াম মাঠে তৃতীয়বারের মতো চলছে অমর একুশে বইমেলা। গতকাল ছিল মেলার ১৪তম দিন। মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। গতকাল মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মা-বাবার হাত ধরে আসা শিশুরা স্টলে স্টলে ঘুরে দেখছে বই। পছন্দ হলেই কিনে দেয়ার বায়না করছিল। এমনই একজন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মৌমিতা। তার পছন্দ গল্প। তৃতীয় শ্রেণির সাইফ বায়না ধরেছে ছড়ার বই কিনতে।
শিশু প্রকাশ স্টলের আরিফ রায়হান আজাদীকে বলেন, শিশু-কিশোরদের উপযোগী গ্রন্থের চাহিদা বেশি। বড়রা পছন্দ হলেও অনেক সময় কিনে না। কিন্তু ছোটদের পছন্দ হলে মা-বাবার কিনে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আলোচনা সভা : গতকাল বইমেলা মঞ্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্‌ফর আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান ও প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলা পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু।
মেয়র বলেন, দেশের স্বাধীনতা বিনির্মাণে বিভিন্ন আন্দোলনের পটভূমি ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণে গাফিলতি লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি ইতিহাসের অনেক অধ্যায়ে অসম্পূর্ণ সংযোজনের ধারক হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের ব্যর্থতাই তুলে ধরবে। অথচ নতুন প্রজন্মকে সঠিক জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজায়েদ খানকে ১৮ সংগঠনে ‘বয়কট’ ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীকে সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ধন্যবাদ