বইমেলার পরিসর বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরিসর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে বর্তমান মেলা প্রাঙ্গণের পেছনের সড়কেও স্টল দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। পরিসর বৃদ্ধি করলে সেখানে মঞ্চ স্থাপন করে নাটকের আয়োজন করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করেন। এমনটা হলে চট্টগ্রামের বইমেলা সারা দেশে ভিন্নতর এবং অনন্য হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বইমেলা আয়োজন ও মানুষের পাঠাভ্যাস পুনরুদ্ধার করা খুব প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রামের বইমেলা ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, এখানে বইমেলার জায়গা ছোট। এটা খুব সহজে বড় করা যায়। ঢাকার বইমেলায় যখন হয় সামনে রাস্তা বন্ধ থাকে। এখানে আশেপাশে দুটো রাস্তা চালু আছে। পেছনের রাস্তায় যান চলাচল কম। সে রাস্তাটা বন্ধ করে সেখানে যদি স্টল দেয়া হয় তাহলে বইমেলার কলেবর আরো বাড়ানো সম্ভব। আগামী বছর থেকে সিটি কর্পোরেশন এটা করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, বইমেলায় নিশ্চয় মোড়ক উন্মোচনের নির্দিষ্ট মঞ্চ আছে। আগামী বছর যদি কলেবর বৃদ্ধি করেন তাহলে অনুরোধ জানাব, রাস্তাটা বইমেলার মধ্যে নিয়ে নেন। সেক্ষেত্রে সেখানে ছোট্ট মঞ্চ করে নাটকের আয়োজনও করা যেতে পারে। তাহলে বইমেলার পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতির চর্চাটাও হবে। আকাশ সংস্কৃতির হিংস্র থাবা সব গিলে খাচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের বাংলার আবহমান ও মৌলিক সংস্কৃতি রক্ষা করা প্রয়োজন। নাটকের মাধ্যমে মানুষের কথা বলা প্রয়োজন, জীবনের কথা শোনা প্রয়োজন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বই মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বই পড়া ছাড়া মানুষের জীবন কখনো সমৃদ্ধ হয় না। যারা পৃথিবী বদলে দিয়েছে, মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে, সাহিত্য বদলে দিয়েছে, পৃথিবীর মানচিত্র বদলে দিয়েছে, তারা সবাই বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আগে পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি ছিল। মানুষ গোগ্রাসে বই পড়ত। এখন তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে সেই অভ্যাস নাই।
তিনি বলেন, বই পড়ার অভ্যাসটা কেড়ে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল ফোনের আসক্তি। এটা বড় যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীরা বই পড়ার চেয়ে মোবাইল ফোনে মগ্ন। এখান থেকে আমাদের কিশোর–তরুণদের রক্ষা করতে হবে। বই পড়ার ওপর জোর দিতে হবে। না হয় আমরা ভবিষ্যতে এমন একটি প্রজন্ম পাব, যে প্রজন্ম হয়ত প্রযুক্তিতে অনেক সমৃদ্ধ হবে, জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে না। প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়া আর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবার মাঝে পার্থক্য আছে। সেজন্য বইমেলার আয়োজন এবং মানুষের পাঠাভ্যাস পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বই মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলে, সংগ্রামী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করে, মুক্তির পথ দেখায় এবং বিনয়ী হতে শেখায়। আবার কল্পনার জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আগামী বছর এ বইমেলার প্রাঙ্গণ আরো বড় করব। তথ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী আগামীবার থেকে মঞ্চনাটক আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি।
সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, বইয়ের চোখে ইতিহাস দেখেন পাঠকরা। বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামজা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এর মতো বইগুলোর মাধ্যমে পাঠকরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছে, বুুঝতে পারছে তৎকালীন ঐতিহাসিক বাস্তবতা। বই না থাকলে আমরা জানতাম না কারাগারে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর কী অনুভূতি হয়েছিল।
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, বই পড়তে হবে। বইয়ের মধ্য দিয়ে নিজের দেশকে চিনবে, নিজের অস্তিত্বকে জানবে। নিজের ঐতিহ্যকে জানতে হলে, নিজের দেশকে জানতে হলে বই পড়তে হবে।
ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, বই এমন বন্ধু যে মানুষকে কখনো ছেড়ে যায় না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) আবদুল মালেক, কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী, মো. আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহীন আকতার রোজী, রুমকি সেনগুপ্ত, হুরে আরা বেগম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, উপ–সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু ও সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস।