বইমেলায় বিদায়ের সুর

মোরশেদ তালুকদার | বুধবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরের সিআরবি শিরীষতলায় করুণ সুরে বাজছে বিদায় রাগিণী। কারণ, অপরূপ নৈসর্গিক প্রকৃতিতে ভরপুর শতবর্ষী বৃক্ষরাজির ছায়ায় ঢাকা শিরীষতলায় চলমান বইমেলা শেষ হচ্ছে আগামী শনিবার। অর্থাৎ আজ বুধবারসহ আর মাত্র চারদিন চলবে বিকিকিনি। তাই তো বিদায় আবাহনের মুহূর্তে মেলায় ব্যস্ততা বেড়েছে লেখক, পাঠক, প্রকাশকের।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল মেলার ১৯তম দিন। মেলার প্রথম দিন থেকে অনেকে স্টলে স্টলে ঘুরে পছন্দ করেন বই। মেলা শেষের পথে, তাই পছন্দের সময় নেই। এখন শুধু কেনা। তাই গতকাল বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন মেলায় অংশ নেওয়া ৯২টি প্রকাশনা সংস্থার স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। পছন্দের বই কিনে পাঠক খুঁজেন এর লেখককে। পেয়ে গেলে নেন অটোগ্রাফ। তাই এদিন সমান ব্যস্ততা ছিল লেখকদেরও। তবে প্রকাশকদের বিশ্বাস, মেলার শেষ দুদিনে বিকিকিনি আরো জমজমাট হবে। কারণ এই দুদিনে রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। মেলার শুরু থেকেই বন্ধের দিনে বাড়তি ভিড় ছিল। যেহেতু মেলা শেষ হয়ে যাবে তাই শেষ ছুটির দিনগুলোও জমজমাট হবে বলে মনে করেন প্রকাশকরা।

ঢাকা থেকে আসা কথাপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী রাসেল আহমেদ রাজু আজাদীকে বলেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলায় অংশ নেওয়া তা অনেকটা পূরণ হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিন। তাই এই দুদিন বেচাকেনা বাড়তে পারে।

মেলায় প্রায় প্রতিদিন এসেছেন কবি সোহেল ইয়াসিন। আজাদীকে তিনি বলেন, কয়েকদিন পর মেলা শেষ হয়ে যাবে। এটা ভেবেই একটু খারাপ লাগছে। নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সঙ্গে সুযোগ করে দেয় বইমেলা। আবার দীর্ঘদিন দেখাসাক্ষাৎ হয় না এমন অনেকের সঙ্গে মেলায় দেখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করার সুযোগ করে দিয়েছে মেলা।

নতুন বইয়ের খবর : এবার দ্বিমত প্রকাশ থেকে বেরিয়েছে মাঈন উদ্দিন জাহেদের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘আদ্দাসের এক থোকা আঙুর’ ও সোহেল ইয়াসিনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একটু দাঁড়াও, রহস্য বাড়ছে’। এছাড়া অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে মাহতাব হোসেনের উপন্যাস ‘রাজপুত’, কথাপ্রকাশ থেকে জয়নুল টিটোর গল্পগ্রন্থ ‘হানিসাকার’ এবং নন্দন বইঘর থেকে বেরিয়েছে সোহেল মাহরুফের ছোটগল্পের সংকলন ‘একদিন স্বপ্নের দিন’। গতকাল মেলায় এসেছে হৃদয় হাসান বাবুর কাব্যগ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ প্রেম’। বইটি বেরিয়েছে স্বাধীন প্রকাশন থেকে। আমেরিকান প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক স্বপন চক্রবর্ত্তী। কলকাতা থেকে বের হওয়া তার তিনটি গল্প ও কবিতার বই ‘শরবিদ্ধ’, ‘কথাশংকর’ ও ‘পরমা’ পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব স্টলে। ‘স্বপন চক্রবর্ত্তী চিরায়ত সাহিত্য ও কবিতার প্রেমে মগ্ন থাকতেই ভালোবাসেন। রাজনীতি ও সমাজ সচেতনতা তাঁর রচনায় সাবলীলভাবেই আলো ফেলে। সুদীর্ঘ প্রবাসজীবনে থেকেও তিনি গভীর মমতায় বুকে ধারণ করে চলেন স্বদেশ ও স্বদেশের সংস্কৃতি। তাঁর তিনটি গ্রন্থেই উঠে এসেছে দেশপ্রেম, মানবিকতা, মানবপ্রেম, প্রকৃতি, সমাজের নানা টানাপোড়েন ও অপার স্মৃতিকাতরতা।’

সোহেল ইয়াসিনের ‘একটু দাঁড়াও, রহস্য বাড়ছে’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, বৃষ্টির কালে মেঘেরা শালীন থাকে কী করে? –এরকম ফিচেল প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারেন যে কবি, তার কবিতার রসগ্রাহী পাঠক হতে ইচ্ছা করে। আঁতুড়ঘরে শিশুর কান্না দেখে বা শুনে বোঝার সাধ্য নাই ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে কীরূপ ছাপ সে রাখতে চলেছে। কেননা মানুষ সৃষ্টির আধার, কবি তার উৎসমুখ। সেই উৎসমুখে দাঁড়িয়ে কবি সোহেল ইয়াসিন পরিবেশনা করেন কবিতাএকবার ফেরাও চোখ/ পুড়ে যাবার পূর্বমুহূর্তে কিছু ছাইভস্মের/ সহজ সংস্থান করে যাবো ভাবছি।

জয়নুল টিটোর গল্পগ্রন্থ ‘হানিসাকার’এ আছে ভিন্ন স্বাদের ৮টি গল্প। একেক গল্পে আছে একেক ধরনের রসবোধ। এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, যে ঘটনাবলির ভেতর দিয়ে গিয়েছি অথবা যে ঘটনাগুলো আমার চৌহদ্দিতে ঘটে গেছে এগুলো সেই গল্প। যাপিতজীবনের গল্প। মেদহীন। বিষয়বৈচিত্র্যের সমাহারে নিরেট বলে যাওয়া কথামালা। গল্পের শরীরে ভ্রমণ করতে গেলে আপনার মনে হলেও হতে পারে ‘আরে! এ তো আমার আশপাশেই ঘটেছে!’ ভালো লাগার আবেশমন খারাপের মৌনতা কিংবা প্রচণ্ড রকমের আক্রোশ অথবা দুঃখবোধ আপনাকে ঘিরে ধরতে পারে।

এছাড়া রোমান্টিক জীবনমুখী ছোটগল্প আছে সোহেল মাহরুফের ‘একদিন স্বপ্নের দিন’এ। প্রতিটি গল্পে ফুটে উঠেছে বর্তমান ব্যস্ত জীবনে টানাপোড়েন, দ্বন্দ্ব, ঘাতসংঘাত। আছে ব্যক্তিগত প্রেম সম্পর্কের অনুভূতি। ব্যক্তি মানুষের জীবন দর্শন, রাজনীতি দর্শনও আছে গল্পগুলোতে।

মেলা মঞ্চে নারী সম্মিলন : বইমেলা মঞ্চে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় নারী সম্মেলন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দীন। মূল আলোচক ছিলেন সাংবাদিক ডেইজি মউদুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মাধবী বড়ুয়া ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নীলু নাগ। চসিক প্যানেল মেয়র আফরোজা কালামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে স্টুডেন্ট কানেক্ট বিডির শিক্ষামেলা
পরবর্তী নিবন্ধটানেল চালুর চার মাসেও ক্ষতিপূরণ পাননি অনেকে