ফ্লোর তোলার পর প্রথম দিন ১১৬ কোম্পানিতে ‘ঝড়’

পুঁজিবাজার

| সোমবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

৩৫টি কোম্পানির বাদ দিয়ে বাকি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় অন্তত ১১৬টি কোম্পানির শেয়ারদর পতনের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। খবর বিডিনিউজের।

গত বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই বিনিয়োগকারীরা বড় দরপতনের ভয়ে ছিল। গতকাল রোববার লেনদেনের শুরুতেই সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণ হয়। প্রথম ৬ মিনিটে সূচক পড়ে যায় ২১৬ পয়েন্ট। এ সময় ফ্লোর তুলে দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে অল্প কিছু বাদে প্রায় সবগুলোই দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হচ্ছিল। কেবল দুটি কোম্পানি দর বেড়ে হাতবদল হচ্ছিল। ফ্লোর প্রাইসের বেশি দর থাকা কোম্পানিগুলোও এ সময় দর হারিয়ে লেনদেন হতে থাকে।

তবে সময় যত গড়াতে থাকে, পতনের গতি কমতে থাকে। লেনদেনের শেষ সোয়া এক ঘণ্টায় হারিয়ে ফেলা সূচকের অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয়। সকালের এই পতনের কারণেই দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকের ৯৬ পয়েন্ট উধাও হয়ে যাওয়া কিছুটা হলেও স্বস্তি আনে। বড় বিনিয়োগকারীরাও অভয় দিচ্ছেন। তারা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। বলেছেন, ফ্লোর তোলার ধাক্কা সামলে বাজার অচিরেই স্বাভাবিক হবে।

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হতে থাকলে ৩১ জুলাই থেকে দ্বিতীয়বারের মতো দেওয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। এতে শেয়ারের দরপতন থামে, কিন্তু লেনদেন নামে তলানিতে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে থাকে। তবে নির্বাচনের আগে ঝুঁকি নিতে চায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ভোট শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ৩৫টি কোম্পানি হাতে রেখে বাকিগুলোর ফ্লোর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। গতকাল প্রথম দিন শেয়ারের ক্রয়চাপের চেয়ে বিক্রয়চাপ বেশি থাকার পর লেনদেনও কমেছে ৫০ কোটি টাকার মতো। ডিএসইতে ৫৮৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়। বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল ৬৩৭ কোটি টাকার বেশি। লেনদেনে আসা ৩৮৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর পতন হয় ২৯৬টির, দর বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে ৫৪টির। ৩৬টির দর ছিল অপরিবর্তিত। সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে আটটি কোম্পানি। তবে লেনদেন হয়নি বললেই চলে।

১০৮টি কোম্পানির দর কমেছে ৯ শতাংশ থেকে ৯.৯৯ শতাংশ পর্যন্ত। আরো ২২টি কোম্পানির দর কমেছে ৮ থেকে ৮.৯৯ শতাংশ। ৬টি কোম্পানির দর ৬ শতাংশের বেশি, ৮টির দর কমেছে ৭ শতাংশের বেশি।

মন্দের ভালো’ দিন?

বাজারের প্রথম দিনের আচরণে ভয় কেটেছে মনে করেন বিনিয়োগকারী ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ভয়ে ছিলাম, না জানি কত লোকসান হয়। সেভাবে লোকসান হয়নি। আমার পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ারের দাম কমলেও ভয় পাওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। আশা করি মার্কেট ভালো হবে। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ করে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল, এত পতন হবে না। যা হয়েছে তা আবার উঠবে।

লেনদেন সামান্য কমা ও হারিয়ে ফেলা সূচকের অনেকটাই পুনরুদ্ধারকে বাজার ‘সংশোধন’ হিসেবে দেখছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এতটুকু পতন প্রত্যাশা ছিল। বাজার সংশোধন হল দেড় বছর পরে। প্রথমে যেভাবে পতন হয়েছে তা তো আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আশা করি সূচক আরো উপরে উঠবে।

বড় পতনের পর উজ্জ্বল যারা : লোকসানি কোম্পানি খান ব্রাদার্সের শেয়ারদরে বিস্ময়কর উত্থান অব্যাহত আছে। সাত মাস আগেও ১০ টাকায় থাকা শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকায়। দর বেড়েছে ৯.৮১ শতাংশ। লোকসানি বিডিথাই অ্যালুমিনিয়ামের দরও বেড়েছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। রূপালী লাইফ ও কোহিনূর কেমিক্যালসের দর ৬ শতাংশের বেশি, কেয়া কসমেটিকস ও দেশবন্ধু পলিমারের দর ৫ শতাংশের বেশি, খুলনা পেপার, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৪ শতাংশের বেশি, সোনালী আঁশের দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। শীর্ষ দশের বাইরে আরো ৫টির দর তিন শতাংশের বেশি, ১০টির দর ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেছেন গুতেরেস
পরবর্তী নিবন্ধতৈরি পোশাক খাতের মতো অন্যান্য রপ্তানি পণ্যকেও গুরুত্ব দিন