ফ্রান্স বয়কট আন্দোলন আমি কেন আর ফরাসি পণ্য ব্যবহার করছি না

| মঙ্গলবার , ৩ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ, জর্ডান থেকে মালয়েশিয়া-বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফরাসী পণ্য বয়কট করার আন্দোলন চলছে। এসব দেশের কিছু কিছু সুপারমার্কেটের শেল্ফ থেকে মেইড ইন ফ্রান্স লেবেল লাগানো জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার। বিবিসি তিন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে – যারা ফরাসি পণ্য আর না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পাকিস্তানি অভিনেত্রী মিশি খান: আমি ফরাসি পণ্য ব্যবহার করতাম, বিশেষ করে ল’রিয়েল। এটা পাকিস্তানে খুব সহজে পাওয়া যায়। এখন আমি কিছু কেনার আগে তার গায়ে লাগানো লেবেল দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করি যে সেটা ফ্রান্সের তৈরি কোন পণ্য নয়। ফরাসি পণ্যের বদলে আমি এখন পাকিস্তানি পণ্য ব্যবহার করছি। কেন? কারণ একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হঠাৎ করে একদিন জেগে ওঠে সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অপমান করতে পারেন না। আমি সোশাল মিডিয়াতে সবাইকে আহবান জানাচ্ছি ফরাসি পণ্য বয়কট করার জন্য। আমার বিবেক অত্যন্ত পরিষ্কার, কারণ ইসলামের পক্ষে আমার অবস্থান তুলে ধরার জন্যই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি যখন প্রথম শার্লি এব্দোর কার্টুনগুলো দেখি, তখন নির্বাক হয়ে যাই। প্রথমে আমি এগুলো এড়িয়ে চলি কিন্তু পরে যখন দেখি আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। আমি কেঁদে ফেলি। আমি আল্লাহকে প্রশ্ন করি, কেন আমি এমন জিনিস দেখতে গেলাম?
তুরস্কের ছাত্রী লাতিফ ওজদেমির: আমি প্রায় প্রতিদিনই কিছু ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার করতাম। তার মধ্যে রয়েছে গার্নিয়ে, লাকুম এবং বিআইসি। কিন্তু এই ঘটনার পর আমি এসব পণ্যের কোনটাই আমি আর কিনবো না। ফরাসি পণ্য আমি বয়কট করছি – কারণ আমি বলতে চাই যে আমরা এটা আর গ্রহণ করবো না। আমি ফ্রান্সের ইসলাম-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই। মুসলিম হিসেবে এবিষয়ে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ আমরা অনেকদিন হল চুপ করে আছি। ঠিক এখন আমরা যেটা করতে পারি তা হল-পণ্য বর্জন করা।
শার্লি এব্দো আরেকটি আক্রমণাত্মক কার্টুন প্রকাশ করেছে যাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে দেখানো হয়েছে যে তিনি প্যান্ট পরেন নি, শুধু একটি টি-শার্ট পরে আছেন। তার এক হাতে বিয়ার এবং আরেক হাত দিয়ে হিজাব পরিহিত মুসলিম এক নারীর স্কার্ট তুলে ধরেছেন। যারা হিজাব পরেন তাদেরকে এই কার্টুন আহত করবে। আমার মতো মুসলিম নারীরা প্রতিদিনই ইসলামের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে সংগ্রাম করছেন। সমাজে তারা আর সকলের সমান একটা অবস্থান গড়ে তুলতে চায়। চায় তাদেরকে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই কার্টুন দেখলে মনে হয় ইউরোপ কখনোই আমাদেরকে একজন অমুসলিম নারীর সমান করে দেখবে না – যা আমাদের জন্য সত্যি দুঃখজনক। কার্টুন এবং স্যাটায়ার গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক এবং চিন্তাকে উস্কে দেয়। কিন্তু ইউরোপ মুসলিমদের গৎবাঁধা চিত্র তুলে ধরছে। এধরনের কার্টুন এঁকে প্রতিবারই আগুনে আরো বেশি করে তেল ঢালা হচ্ছে। আমরা কি এরকম কিছু চাই যে এই বিশ্বে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে আমরা একে অপরকে আক্রমণ ও ঘৃণা করবো?
মৌরিতানিয়ার ছাত্রী হিবা মোহামেদ মুসা: ফ্রান্সে যা হচ্ছে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভে আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে যোগ দিয়েছি। ফরাসি অর্থনীতি ধসে পড়বে এই আশায় আমরা ফরাসি পণ্য বয়কট করছি। আশা করছি যে ম্যাক্রঁ ঘৃণাসূচক বক্তব্য দেওয়ার জন্য দুশো কোটি মুসলিমের কাছে ক্ষমা চাইবেন।
লাফিং কাউ চিজের বদলে আমরা এখন তুর্কী পণ্য ক্রয় করছি। আমার কাছে লাকোস্টের মতো কিছু ফরাসি পারফিউম ছিল। এসব বোতল শেষ হয়ে গেলে আমি এটা আর কিনছি না। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ যাতে ক্ষমা চান এই দাবি জানিয়ে আমি তাকে একটি চিঠি লিখেছি।
চিঠিতে আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি, যদি তার শিক্ষক সম্মান জানানোর মতো মানুষ হন, তাহলে আমাদের নবীদের বেলায় কী হবে, তারাও তো শিক্ষক! আমাদেরকে যেটা সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ করেছে তা হল তার ইসলাম-বিদ্বেষী বক্তব্যে ইসলামকে বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা। এটা অন্যায় এবং উস্কানি যা আমরা আর সহ্য করতে পারবো না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নিতে চায় মালদ্বীপ
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে পাঁচ বছরে ৩২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে