ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ফলাফলে সবাইকে অবাক করে শীর্ষস্থান দখল করেছে বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি), তবে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এক সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বের ভোটে কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) ঐতিহাসিক জয় পেলেও এ পর্বে তারা তৃতীয় হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর মধ্যপন্থি এনসেম্বল জোট দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। খবর বিডিনিউজের।
রোববারের ভোটের রাতটি ফ্রান্সের সবার জন্য অপ্রত্যাশিত বার্তা নিয়ে আসে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে যেমন ফলাফল আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল হয়েছে তার উল্টো। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে কট্টর ডানপন্থীদের হতাশ করে জয় পায় বামপন্থিরা। কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পেতে যাচ্ছে ফ্রান্স। আর এই তিন জোটের একসঙ্গে কাজ করার কোনো ঐতিহ্য নেই, বলে জানিয়েছে বিবিসি। এক মাস আগে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রান্স থেকে কট্টর ডানপন্থিরা জয় পাওয়ার পর হতাশ মাক্রোঁ দেশে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের ডাক দেন। ইইউয়ের নির্বাচনে ডানপন্থিদের জোয়ারে মাক্রোঁর মধ্যপন্থি দল খারাপ ফল করায় তিনি জুনে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ঘোষণা দেন। নির্বাচনের ফলাফল আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে মাক্রোঁ কোনো মন্তব্য করেননি। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রথম পর্বে কট্টর ডানপন্থিরা জয়ী হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্বে তাদের ঠেকাতে বামপন্থি ও মধ্যপন্থি দলগুলো একজোট হয়ে লড়াই করে। বহু নির্বাচনী আসনে মধ্যপন্থি ও বামপন্থি প্রার্থীরা তাদের মধ্যে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান।
রয়টার্স জানিয়েছে, ফ্রান্সের ভোটাররা মারিন লু পেনের জাতীয়তাবাদী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমপ্রসারণ বিরোধী আরএনকে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, অথচ নির্বাচনপূর্ব জরিপগুলোতে দলটি দ্বিতীয় পর্বে জয় পেতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছিল।
নির্বাচনের ফল মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর জন্যও একটি ধাক্কা, কারণ তিনি আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেলেন একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। এতে ইইউতে ফ্রান্সের ভূমিকা দুর্বল হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট তিনটি বড় জোট– বামপন্থি, মধ্যপন্থি ও ডানপন্থির মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের প্রত্যেকেরই পুরোপুরি পৃথক ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে এবং কোনো ক্ষেত্রেই একমত হওয়ার কোনো ঐতিহ্য নেই।
বামপন্থি জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে কট্টর বাম, গ্রিনস ও সমাজতন্ত্রীরা আছে। তারা ভোটের আগে তাড়াহুড়া করেজোট গঠন করেছে। পার্লামেন্টের ৫৭৭ আসনের মধ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ২৮৯ আসনে জয় দরকার, কিন্তু বামপন্থি জোট এর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।
পালার্মেন্ট নির্বাচনের অধিকাংশ আসনের ফল ঘোষণা হয়ে গেলেও এখনও কিছু বাকি আছে। ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সোমবার সকালের মধ্যেই সব ফল ঘোষণা হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জরিপ সংস্থাগুলো নির্বাচনের ফলের যে পূর্বাভাস তুলে ধরে তা সাধারণত সঠিক হয়।
তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বামপন্থিরা ১৮৪ থেকে ১৯৮টি আসন, মাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট ১৬০ থেকে ১৬৯টি আসন এবং লু পেনের আরএন ও এর মিত্ররা ১৩৫ থেকে ১৪৩টি আসন পেতে পারে।