বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতিহাসের অংশ হওয়া যে নৌকাগুলো রয়েছে সেগুলোর স্মৃতি নিয়ে ফৌজদারহাটের ডিসি পার্কের পাশে একটি নৌকা মিউজিয়াম করা হবে। সেখানে বড় আকারে ময়ুর–পঙ্ক্ষী, বজরা, সাম্পান, বিভিন্ন ধরনের নৌকার রেপ্লিকা থাকবে। ভবিষ্যতে এগুলোতে থ্রিডির মাধ্যমে ফ্যাসিলিটিস রাখার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে করে ঝড়ের সময় জেলে ও মাঝি–মাল্লারা নৌকা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা সাজাতে পারে। আমাদের দেশের ইতিহাস–ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হবে।
গতকাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশ্ব পর্যটন দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এসব কথা বলেন। এর আগে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব পর্যটন দিবসের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর একটি র্যালি বের করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। আলোচনা সভা শেষে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে পর্যটকদের সুবিধার্থে অনলাইন টিকেট বুকিং সিস্টেমের স্মারক ডাক টিকেটের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক বলেন, নৌকা মিউজিয়াম করার পাশাপাশি গুলিয়াখালী বিচ ও খৈয়াচড়া বিচের রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। পতেঙ্গা সি–বিচের বেহাল অবস্থা। সেখানে টয়লেট–ওয়াশরুম স্থাপন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, লকার রুম, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। পর্যটন এলাকা হিসেবে শুধু পতেঙ্গা সি–বিচে নয়, প্রত্যেক পর্যটন স্পটে ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে হোটেল–রেস্টুরেন্টে উন্নতমানের খাবারের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসানের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল–মামুনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার এসএম সফিউল্লাহ, ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরওয়ার কামাল দুলু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আবু রায়হান দোলন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জামশেদ আলম রানা, পর্যটন হোটেল সৈকতের ব্যবস্থাপক মো. সারেয়ার উদ্দিন, চিটাগাং অনলাইন ট্রাভেল এডমিন গ্রোজের (কট্যাগ) সদস্য রাশেদুল হাসান ইমন।
আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রামে যে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো রয়েছে সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের পতেঙ্গা সি–বিচে যাওয়ার জন্য জনসাধারণের অনেক ভোগান্তি হয়। সেটির কথা বিবেচনা করে আমরা বিআরটিসির সাথে যোগাযোগ করেছি। সৌভাগ্যবশত সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সাথে যোগাযোগ করার পর বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান সাথে সাথে রাজি হয়ে ২টি পর্যটক বাস দিয়ে দিয়েছেন। আমি আরও ৪টি বাস চেয়েছি, এর মধ্যে আরও একটি ছাদ খোলা বাস গতকাল (মঙ্গলবার) এসেছে। আমরা আশা করছি, আরও কিছু ছাদ খোলা বাস চট্টগ্রামে পাবো এবং টুরিস্টদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হব। বিআরটিসির কাছে মেয়েদের জন্য ৪টি ডেডিকেটেড বাস চেয়েছেন উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, আশাকরি সেগুলো আমরা পাবই। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ১ থেকে দেড় মাস অর্থাৎ আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আমরা রিভার ক্রুজ চালু করব, আমরা প্রাথমিকভাবে শুক্র–শনিবারে এগুলো চালু করব।
জেলা প্রশাসক বলেন, কর্ণফুলী টানেল হয়ে যাচ্ছে। এটি চালু হলে পার্কি বিচসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটের জন্য ডে ট্যুর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪টি এসি বাস বিআরটিসির কাছে চেয়েছি। এগুলো দেয়া হলে টানেল ভিত্তিক ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতবর্ষের যে বিদ্রোহের সুতিকাগার চট্টগ্রাম। ইউরোপিয়ান ক্লাব, মাস্টার দা সূর্য সেনের পৈত্রিক ভিটা, ফয়’স লেক, চিড়িয়াখানা আছে, সেগুলো নিয়ে আপনারা ট্যুরিজমের চিন্তাভাবনা করতে পারেন। অনেক দেশি–বিদেশি এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিতে চায়। কাট্টলীর রানী–রাসমনি ও আকমল আলী ঘাটে জেলে পল্লী আছে, তাদেরকে নিয়ে কথা বলতে পারেন। ৫/১০টি পরিবার নিয়ে তাদের লাইফ স্টাইল নিয়ে আপনারা কাজ করতে পারেন, তাবু নিয়ে অবস্থান করে দেখতে পারেন যে তাদের জীবন কেমন কাটে। তাদের খাবারের ব্যবস্থাসহ সেখানে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম করতে পারেন।