চট্টগ্রামে নির্জন সড়কে গান গাইতে গাইতে শাহাদাত হোসেন নামের যে যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল তাকে টেলিফোনে বাসা থেকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তার এক স্বজন। গত ১৪ আগস্ট শাহাদাতের লাশের সন্ধান মেলে শহরের বদনা শাহ’র মাজারের সামনে থেকে। লাশের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। এর এক মাস ৬ দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক যুবককে বেঁধে পেটানোর ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হলে তার পরিচয় মেলে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তারের মোবাইলে কল করা হলে সেটি হোসেনে আরা নামের এক নারী রিসিভ করে নিজেকে শারমিনের বড় বোন বলে পরিচয় দেন। হোসেনে আরা বলেন, বছর দুয়েক আগে শারমিন নিজের পছন্দে শাহাদাতকে বিয়ে করেন। বিআরটিসি বাস কাউন্টার সংলগ্ন বয়লার কলোনিতে শাহাদাত তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। শাহাদাতের মৃত্যুর পর শারমিনকে তার বাবার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
হোসনে আরা বলেন, শারমিন বলেছে ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহাদাতের পরিচিত সাগর নামে এক যুবক ফোন করে ‘কথা আছে’ বলে বাসা থেকে বের হতে বলেন। শাহাদাত টেলিফোনে বলার অনুরোধ করার পরও অপর প্রান্ত থেকে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুরোধ করায় তিনি বের হয়েছিলেন।
বাসা থেকে বের হওয়ার পর শাহাদাতের খোঁজ মিলছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরদিন সন্ধ্যায় আমরা ফেইসবুকে একটি লাশের ছবি দেখে সেটি শাহাদাতের বলে নিশ্চিত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাদের থানায় পাঠানো হয়েছিল। রাতে থানা থেকে বের হয়ে আসার সময় এক যুবক তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন দাবি করে হোসনে আরা বলেন, ওই যুবক আমাদের বলেছে, দুই নম্বর গেট এলাকায় একটা ছেলেকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছিল। আপনারা তার পরিবারের কেউ কিনা। তখন আমরা ভয়ে পরিচয় না দিয়ে বলেছি পারিবারিক একটা ঝামেলার কারণে আমরা থানায় এসেছি।
সাগর নামের যে যুবক টেলিফোনে শাহাদাতকে বাসা থেকে বের হতে বলেছিলেন পরে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি দাবি করে হোসেনে আরা বলেন, আমরা শুনেছি শাহাদাত তাকে (সাগর) পাঁচ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল। সে টাকা ফেরত না দেওয়ায় দুজনের মধ্যে একটু ঝামেলাও হয়েছিল।
শাহাদাতকে পিটিয়ে মারার বিষয়টি আগে স্বজনরা জানত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শাহাদাতকে পিটিয়ে মেরে ফেলার বিষয়টি জানতাম না। গত পরশু দিন (শনিবার) আমাদেরকে থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশ ভিডিও দেখায়, তখন সেটি আমরা শাহাদাতকে মারধরের বলে নিশ্চিত হয়েছি।
শাহাদাতের লাশ উদ্ধারের পর গত ১৫ আগস্ট পাঁচলাইশ থানায় একটি অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী তার চাচা মো. হারুন। হারুন বলেন, ১৪ আগস্ট রাতে ফেইসবুকে শাহাদাতের লাশের ছবি দেখার পর তার মা, স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানে লাশঘরে শাহাদাতের লাশ ছিল। আমরা লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলেছে, পোস্ট মোর্টেম ছাড়া লাশ দেওয়া যাবে না। পরদিন সকালে পোস্ট মোর্টেমের পর আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। চৈতন্য গলি নগর বাইশ মহল্লা কবরস্থানে শাহাদাতকে দাফন করা হয়।
১৪ আগস্ট প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের বিপরীতে বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে রাস্তায় শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তারাই প্রথমে লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেডিকেলে যায় ও পরবর্তী আইনি কাজ সারে।
নগর পুলিশের উপ–কমিশনার (ক্রাইম) রইছ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা ১৩ আগস্ট রাতে ষোলশহর দুই নম্বর গেটের আশপাশে শাহাদাতকে মারধর করা হয়। পরে তার লাশ বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে ফেলে রাখা হয়। শাহাদাতের স্বজনরাও জানত না, তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মারধরের ভিডিও পেয়ে আমরাই তাদের ডেকে এনে মারধরের শিকার ব্যক্তি শাহাদাত বলে নিশ্চিত হয়েছি।
তিনি বলেন, অপরাধীদের ধরতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যারা হামলায় জড়িত ছিল তাদের শনাক্তে ভিডিওটি নিয়ে কাজ করছে বিশেষ টিম।
কেন শাহাদাতকে মারা হয়েছে, পুলিশ সেটির উত্তর খুঁজছে জানিয়ে উপকমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, নিহত শাহাদাতের নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। কখনো তিনি রিকশা চালাতেন, কখনো বিআরটিসি এলাকার ফলমন্ডিতে কাজ করতেন, যখন যা পেতেন তাই করতেন। শাহাদাতের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা এবং কারো সাথে কোনো বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা সব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।