ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে এই সোশাল মিডিয়া কোম্পানির ওভারসাইট বোর্ড। তবে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে চিরতরে নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার সমালোচনা করে এই বোর্ড বলেছে, ওই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে এমন একটি যৌক্তিক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যা সাধারণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। যৌক্তিক শাস্তি নির্ধারণ করতে বোর্ড থেকে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছে। ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর গত জানুয়ারিতে ফেইসবুক থেকে নিষিদ্ধ করা হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, যখন তিনি প্রেসিডেন্টের মেয়াদের একেবারে শেষ দিকে ছিলেন। কোনো রাষ্ট্রনেতার ক্ষেত্রে এমন নিষেধাজ্ঞা নজিরবিহীন। পরে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ফেসবুকের ২০ সদস্যের ওভারসাইট বোর্ডে যায়, যা ফেসবুকের সুপ্রিম কোর্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, ওভারসাইট বোর্ড কী সিদ্ধান্ত দেয় তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই, কারণ ভবিষ্যতে রাষ্ট্রনেতারা নিয়ম ভাঙলে ফেসবুক কেমন পদক্ষেপ নেবে, বোর্ডের সিদ্ধান্তেই তার ইংগিত মিলবে। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওভারসাইট বোর্ডের উপ প্রধান সাবেক ফেডারেল বিচারপতি মাইকেল ম্যাককনেল বলেন, ফেসবুক (ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর) অনির্দিষ্টকালের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে এবং পুরো বিষয়টি এই আশায় ওভারসাইট বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে যে, বোর্ড এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে যেটা তারা অতীতে কখনো করেনি। এই ধরনের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের শাস্তি আন্তর্জাতিকভাবে বা আমেরিকায় স্পষ্টতা, ধারাবাহিকতা এবং স্বচ্ছতার বিচারে গ্রহণযোগ্য হবে না। খবর বিডিনিউজের।
ট্রাম্পের জন্য ছয় মাসের মধ্যে একটি যৌক্তিক শাস্তি নির্ধারণের যে নির্দেশ বোর্ড দিয়েছে, এখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেবে বলে জানান সংস্থাটির বৈদেশিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ। তিনি বলেন, আমরা এখন বোর্ডের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেব এবং স্পষ্ট ও যৌক্তিক শাস্তি নির্ধারণ করব। একটি সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে।
ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার সময় ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এক পোস্টে বলেছিলেন, এই সময়ে প্রেসিডেন্টকে আমাদের সেবা ব্যবহার করতে দেওয়ার ঝুঁকি এক কথায় বিশাল। বিশ্বনেতা এবং রাজনীতিকরা যেভাবে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের নিয়মকানুন লক্সঘন করছেন, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেটা নির্ধারণে কোম্পানিগুলোক রীতিমত ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। ট্রাম্পের ঘটনায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে উভয়পক্ষের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। একপক্ষ বলেছে, রাজনৈতিক বক্তৃতার ক্ষেত্রে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ যেভাবে হাত তুলে বসে থাকার নীতি গ্রহণ করেছে তাদের সেটা বাদ দেওয়া উচিত। আরেক পক্ষ বলেছে, ট্রাম্পের একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া সেন্সরশিপের উদ্বেগজনক উদাহরণ। ফেসবুকের ওভারসাইট বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েও এরই মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে।
রিয়্যাল ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, আজকের সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। এই রায় উভয় নৌকায় পা দিয়ে চলার মত পাগলামী। তারা ট্রাম্পকে প্রকৃতপক্ষে নিষিদ্ধ না করেই তার উপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন দিয়েছে। যেখান ফেসবুকে ফিরে আসার বিষয়ে তাদের একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা।