চার দিন স্থিতিশীল থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার থেকে পাইকারিতে ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি ভারত থেকে যেসব পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে তার অধিকাংশই পচা। আবার অন্যান্য দেশ থেকে এখনো পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়নি। তাই এখন পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। মূলত সরবরাহ কমার কারণেই দাম বাড়ছে।
পেঁয়াজের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে চাল-ডালসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে লাগামহীন ছিল ভোগ্যপণ্যের বাজার। মাঝখানের কিছু সময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও চড়া হতে শুরু করেছে বাজার। বর্তমানে প্রত্যেক পণ্যের দাম কেজিতে ৩ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেবল মরিচ, আদা ও হলুদের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র (প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশন) থেকে ৯টি আইপির বিপরীতে ৩ হাজার ১৯৫ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংস্থাটির উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, এখন পর্যন্ত ২৮৩ আইপির বিপরীতে মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৯২২ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন আমদানিকারকরা। মিয়ানমার, চীন, মিশর, পাকিস্তান, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে সমুদ্র পথে এসব পেঁয়াজ আসবে বলে জানান তিনি।
গতকাল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, অধিকাংশ দোকান ও গুদামে পেঁয়াজের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। তাই দামও বাড়ছে।
হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আজাদীকে বলেন, এখন পেঁয়াজের বাজার বাড়তির দিকে রয়েছে। আজ (গতকাল) খাতুনগঞ্জে মাত্র দুই গাড়ি পেঁয়াজ এসেছে। সেগুলোর মানও খুব ভালো নয়। এছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করেনি। তবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হলে তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
গতকাল নগরীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাইকারিতে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। বর্তমানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। এছাড়া রসুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মোটা দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।
অন্যদিকে চিকন দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকায়। এছাড়া বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। বোতলজাত সয়াবিনের দাম মানভেদে লিটারে ২-৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল এক লিটার ১১০ টাকা, ২ লিটার ২১০ টাকা, ৩ লিটার ৩১০ টাকা এবং ৫ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকায়। বেড়েছে চিনির দামও। বর্তমানে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি ভারতীয় মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। হাটহাজারীর মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
গত এক সপ্তাহ ধরে চড়া রয়েছে চালের বাজার। খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বর্তমানে খুচরা বাজারে নাজিরশাইল সিদ্ধ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা, জিরাশাইল সিদ্ধ ৫৭-৫৮ টাকা, মিনিকেট আতপ ৫০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ৫২ টাকা, মোটা সিদ্ধ ৪৫ টাকা, কাটারিভোগ আতপ ৬০-৬২ টাকা এবং চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকায়।
কাজীর দেউড়ির ভাণ্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। পাইকারি দোকানদাররা আমাদের জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের বুকিং দর বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে দর কমে গেলে খুচরাতেও কমে যাবে।
এম এম ইলিয়াছ উদ্দিন নামে একজন ক্রেতা বলেন, হঠাৎ করে বাজারের সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।