পাইকারিতে এখনো ওঠানামা করছে আলুর বাজার। গত সপ্তাহে আলুর দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও গতকাল থেকে ফের বাড়ছে দাম। প্রতি কেজি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অথচ খুুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ থেকে প্রতি কেজি ২৩ টাকা এবং পাইকারিতে প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করা হয় ২৫ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মাঝে সেই নির্দেশনা মানার বালাই নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর দেশের সকল জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠায়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা না করার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ, এখনো ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩৩-৩৪ টাকায়। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে দাম বাড়ছে। এছাড়া পাইকারিতে সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আবারও আলুর দাম বাড়ছে। কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে দাম বেশি হলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। যেমন আজ (গতকাল) মুন্সিগঞ্জের পার্টিরা বলছে, প্রতি কেজি ৩৯ টাকার নিচে আলু বিক্রি করবে না। এই দামে অনেকে আবার আলু কিনতে আগ্রহী না।
কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা জানান, প্রতি বছর দেশে এক কোটি টন আলু উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে দেশে ব্যবহার হয় ৭০ লাখ টনের মতো। বাকি ৩০ লাখ টন আলু প্রতি বছর উদ্বৃত্ত থাকে। চলতি বছর করোনাকালে ত্রাণ হিসেবে আলুর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া এবং মালয়েশিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে আলুর রপ্তানি বাড়ার কারণে দেশে সংকট দেখা দিয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজের পর এবার শুরু হয়েছে আলু নিয়ে কারসাজি। অথচ দেশে কখনো আলুর সংকট ছিল না। আমাদের দেশে সব সময় আলুর বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী আলুর চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের পকেট কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। প্রশাসনও এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে না। ব্যবসায়ীরা এখন অজুহাত দাঁড় করিয়েছে, করোনাকালে প্রচুর পরিমাণ আলু ত্রাণ হিসেবে চলে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া আগের বছরের চেয়ে আলু বেশি রপ্তানি হয়েছে, এমন দাবিও করছেন। মূল কথা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই প্রশাসনকে অভিযান চালানোর মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে।
এদিকে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোল্ড স্টোরেজ মালিক, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটা না মানলে কোল্ড স্টোরেজ থেকে এই দামে আলু কিনে বাজারে ছাড়ার ক্ষমতা সরকারের আছে। আমরা তাদের বিপদে ফেলতে চাই না। যেভাবে হিসাব করা হয়েছে ২৩, ২৫ ও ৩০ টাকা; সেটা যথেষ্ট বিবেচনার মাধ্যমেই করা হয়েছে।