দীর্ঘ বিরতির পর ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা ভাইরাস। হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগও বাড়ছে। চট্টগ্রামে গত চারদিনে নগর ও উপজেলা মিলিয়ে ছয়জনের করোনা ধরা পড়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে আরটিপিসিআর পরীক্ষার কিট ও জনবল সংকটের কারণে শুরু করা যায়নি। এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষা শুরু হলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে পারে বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে পরীক্ষা করাতেও অনাগ্রহী। অপরদিকে করোনা চিকিৎসায় গত ২০২০ সালে ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া আছে জনবল সংকট। এর আগে করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ সেবা দিয়ে আলোচনায় আসা জেনারেল হাসপাতালের ১৮টি শয্যার আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের যন্ত্র (ভেন্টিলেটর) ছিল ২২টি। এখন সচল রয়েছে মাত্র একটি। তা–ও আবার মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের ভেন্টিলেটর সেবা দেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া চমেক হাসপাতালেও সাধারণ রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই। প্রায় সময় আইসিইউ’র জন্য রোগীর স্বজনেরা হাহাকার করেন। এদিকে গত বুধবার স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের জরুরি বৈঠকে ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা এবং সিটি করপোরেশনের মেমন–২ হাসপাতালে ২০ শয্যার কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটের কারণে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল শতভাগ প্রস্তুত হয়নি। এছাড়া চমেক হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরটিপিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী সপ্তাহে পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কিট চলে আসবে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের আইসিইউ শয্যার নষ্ট ভেন্টিলেটরগুলো সচল করতে ঢাকা থেকে লোক আসবে। এগুলো আগামী সপ্তাহের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে। এছাড়া আমাদের হাই ফ্লো নজ্যাল ক্যানুলা, বাইপাইপ মেশিন রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আমাদের সেন্ট্রাল অঙিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। যে কারণে আমরা রোগীদের এই সংক্রান্ত পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে পারবো। এছাড়া আমাদের জনবল সংকটের বিষয়টিও জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. ইমাম হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেমন–২ হাসপাতালে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। এখানে ২০টি শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে শয্যাগুলো প্রস্তুত হবে। পাশাপাশি এখানে আমরা কিট পেলে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করব।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, করোনা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট রয়েছে। আগামী সপ্তাহে সেই কিটও চলে আসবে। করোনা মোকাবেলায় যেহেতু আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা আছে, তাই আশা করি তেমন বেগ পেতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং মাস্ক পরার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনা মোকাবিলায় নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কিটের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আমাদের কিট আনার জন্য লোক পাঠাতে বলা হয়েছে। কিট আসার পর সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করি আমরা পর্যাপ্ত কিট পাবো।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাসপাতালের নিচতলায় ৫০ শয্যার একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড রয়েছে। আমাদের চিন্তা হচ্ছে–যদি করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়, তবে আমরা ডেঙ্গু রোগীদের আগের মতো বিভিন্ন মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিবো। এছাড়া ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে আমরা করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করবো। যেটা ২০২০ সালে করা হয়েছিল। এখানে ৫০ শয্যার পাশাপাশি ১০ টি আইসিইউ শয্যাও স্থাপন করা হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো– জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং উপস্থিত হতে হলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। শ্বাসতন্ত্রের রোগ সমূহ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁচি/কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনা যুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। ঘনঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। এছাড়া সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে– জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। রোগীর নাক–মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। রোগীর সেবাদানকারীগণও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১–১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩) এর নম্বরে যোগাযোগ করুন।