ফেরত যাচ্ছে পাউবো প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি টাকা

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

টাকার অভাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন খাল খনন করতে না পারলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেড় হাজার কোটিরও বেশি টাকার একটি প্রকল্প থেকে অর্ধেকের বেশি টাকা ফেরত যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গৃহিত প্রকল্পটির কাজ করতে না পারার প্রেক্ষিতে এসব টাকা ফেরত যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন টাকার অভাবে খাল খনন করতে না পারার বিষয়টি গতকাল প্রকাশ হয়েছে। চসিকের নবনির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদের সাথে কথোপকথনে বিষয়টি প্রকাশ হয়। জানা যায়, ৩১৪ কোটি টাকা না থাকায় বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকল্পটি আটকে আছে। অথচ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরীর বহদ্দারহাট মুরাদপুর ষোলশহর দুই নম্বর গেটসহ সন্নিহিত অঞ্চল জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি নিস্তার পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। খালটি খনন করার ব্যাপারে নানা ধরনের কার্যক্রম চললেও শেষ পর্যন্ত মাত্র তিনশ’ কোটি টাকার অভাবে তা ঝুলে আছে। অথচ চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহিত দেড় হাজার কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্প থেকে অর্ধেকেরও বেশি টাকা ফেরত যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৮ সালে একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পটিতে খাল থেকে মাটি উত্তোলন এবং রেগুলেটর নির্মাণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং নালা নর্দমা তৈরিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড রয়েছে। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু গত তিন বছরেও প্রকল্পটি নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পদে পদে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির বেশ কিছু কাজ রয়েছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। বন্দরের এলাকায় এসব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, নেভাল একাডেমি থেকে বন্দরের ১৫ নম্বর ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং ১৫ নম্বর ঘাট থেকে বন্দর পর্যন্ত এবং বন্দরের এলাকা বাদ দিয়ে বাংলাবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ফ্লাড ওয়াল নির্মাণেও আপত্তি রয়েছে বন্দরের। এসব কাজ পরিচালনা করা হলে নদীতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। অপরদিকে প্রকল্পটিতে কর্ণফুলী নদীতে পড়া ৩২টি খালে রেগুলেটর স্থাপন করার কথা থাকলেও সিডিএ ইতোমধ্যে ৮টি রেগুলেটর স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। সিডিএ আরো ৪টি রেগুলেটর এবং বোট পাসের কাজ করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বন্দরের আপত্তির কারণে রিটেইনিং ওয়াল এবং ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না, আবার সিডিএর কাজের ফলে যদি রেগুলেটর নির্মাণের কাজ কমে যায় অন্যদিকে আউটার রিং রোডের নিচ দিয়ে সমুদ্রে পড়া খালগুলোর মুখে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ যদি প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হয় তাহলে এই প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি টাকারই কোনো কাজ নেই। এসব টাকা ফেরত দিয়ে নতুন করে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে।
এই ব্যাপারে বন্দরের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নদীর উপর কিছু করতে গেলেই আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হয়। কোথায় কি ধরনের পদক্ষেপের ফলে নদীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা, চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে কিনা, সিলটেশন হচ্ছে কিনা ইত্যাদি দেখতে হয়। তাছাড়া বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার মাঝে বিশেষ সতর্কতা ছাড়া কাজ করা অসম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একনেকে পাশ করা প্রকল্পটিতে কী কী কাজ করা হবে তা বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে যেসব কাজ করা যাবে না সেগুলোর টাকা ফেরত যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একদিকে টাকার অভাবে প্রকল্প ঝুলে যাচ্ছে, অপরদিকে প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। অথচ দুইটিই একই লক্ষ্যের প্রকল্প। সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলে এমন সংকট তৈরি হতো না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণ-আন্দোলনে রূপ নেয় রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধমাবুদ হত্যা মামলায় পটিয়ার কাউন্সিলর রাজীব রিমান্ডে