‘আমি মুগ্ধ আমি প্রীত, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে। সত্যিই আমি গর্বিত। বিশিষ্ট ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ বাংলা ভাষার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপরোক্ত উক্তির মাধ্যমে যথার্থই বলেছেন। বাংলা ভাষা এমন একটি ভাষা যে ভাষার জন্য দিতে হয়েছে বাংলা দেশের টগবগে তরুণদের তরতাজা রক্ত। যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের ইতিহাসে বিরল। ফেব্রুয়ারি মাসের আগমন সকল বাঙালির মনে একটি বিশেষত্ব বহন করে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাস ১৯৫২ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অর্জন করার অনেক স্মৃতি বিজড়িত মাস। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকে সূচনা হয়েছিল এক আন্দোলনের যা ভাষা আন্দোলন নামে খ্যাত।
এই আন্দোলন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হয়। কোন জাতিই মাতৃভাষার অপমান সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্ন জন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে, এবং স্কুল ও মিডিয়াতে উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব করেছিল পাকিস্তানের তৎকালীন সরকার। এতে বাঙালির জনগণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। বাঙালির ভাষাকে আত্ম উন্মেষের সূত্র ধরে ১৯৪৭ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে প্রথমে ভাষা বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঐদিন সকাল ৯.০০ টায় ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায় এতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার সহ অনেকেই শহীদ হন শহীদদের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালিরা পেল মাতৃভাষার মর্যাদা। বাংলা হল রাষ্ট্রভাষা।
সময় পরিক্রমায় বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, এর ৩০ তম অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। উল্লেখ্য জাতিসংঘ ৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাই ফেব্রুয়ারি মাস সকল বাঙালির কাছে ভাষার মাস, অনন্য এক প্রাপ্তির মাস। যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের মায়ের বোল। সেই সব বীর ভাষা শহীদদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তারা চির অমর হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।