ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে মহোৎসবের

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা দ্বিমতের জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না আলাদিনের প্রদীপের দৈত্য পেয়েছি, বড় কিছু চাই

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের পথে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেটি হবে জাতির নবজন্মের মহোৎসব।

গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে তিনি এ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, শুরুতে যখন কমিশনের ধারণা এলো, আমি নিশ্চিত ছিলাম না এটা টিকবে কিনা। কিন্তু আজ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরে আপনাদের আলোচনা ও সিদ্ধান্তে আমি অভিভূত হয়েছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কমিশনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোও অনুসরণ করবে। এটা শুধু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে না, সারা দুনিয়া লক্ষ্য করবে আমরা কিভাবে সমস্যার সমাধান করলাম। তিনি বলেন, জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই। যে পথে আমরা শুরু করেছি, সেই পথ থেকে বের হবার কোনো সুযোগ নেই। এই সমতায় আমাদের আসতেই হবে। এটাই ছাত্রজনতার দেওয়া সুযোগ, যেখান থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।

আগামী নির্বাচনের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা বারবার বলেছি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। সেটি হবে মহোৎসবের নির্বাচন। যদি আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে ফয়সালা করতে পারি। এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, এটি হবে জাতির নবজন্ম। জাতির সত্যিকার নবজন্ম হবে; এটা শুধু নির্বাচন না, এটা নবজন্ম। এই যে এত ত্যাগ, এত রক্ত, এগুলো সার্থক হবে যদি আমরা এই নবজন্মটা লাভ করতে পারি। তিনি সতর্ক করে দেন, বিভাজন বা দ্বিমতের কোনো স্থান নেই। আমরা অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু দ্বিমত রেখে সমাপ্ত করতে পারব না। যখন ঐকমত্যে পৌঁছাব, তখনই নির্বাচন সার্থক হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এত বড় কাজ আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না। তাই ধৈর্য ধরে আমাদের এগোতে হবে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আমাদের কাজ হলো কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই মহোৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

তিনি বলেন, আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি, এখন শুধু সাইনবোর্ড বসানো বাকি। পথ ঠিক আছে, গন্তব্য পরিষ্কার। এই নির্বাচন হবে উৎসবের নির্বাচন, দেশের শান্তি ও নতুন যাত্রার সূচনা। আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো সব পথঘাট বন্ধ করা, যাতে কোনো স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে না পারে। এজন্য সবাইকে একমত হতে হবে।

কমিশনের কাজকে অভূতপূর্ব অর্জন বলে অভিহিত করেন তিনি। কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনারা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছেন। এখন শুধু এটিকে নিখুঁতভাবে সমাপ্ত করা দরকার। এর মধ্য দিয়েই নতুন জাতির জন্ম ঘটবে।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এবার আমাদের ব্যর্থ হবার কোনো সুযোগ নেই। ঐকমত্যের এই পথেই আমরা এগোব, নির্বাচন সফল করব এবং জাতি হিসেবে মহাউৎসবের যাত্রা শুরু করব।

আলাদিনের প্রদীপের দৈত্য পেয়েছি : জুলাই অভ্যুত্থান রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে, ইউনূস তাকে তুলনা করেন আলাদিনের প্রদীপের দৈত্যের সঙ্গে। আলাদিনের প্রদীপে ঘষা দিলে একটা দৈত্য বেরিয়ে আসে। দৈত্য এসে জিজ্ঞেস করে, কী করতে হবে আমার। এই যে প্রশ্নটা করে, এটার উত্তরে নানাভাবে দেওয়া যায়। বলতে পারে যে আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে এসো। সে চা নিয়ে আসবে। তাকে যদি বলা হয় সারা দুনিয়া আমার কাছে নিয়ে আস, সারা দুনিয়া নিয়ে আসত। এখন ছাত্রজনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই দৈত্য সৃষ্টি করে দিয়েছে আমাদেরকে। আমরা তার কাছে কী চাইব? আমরা কি তার কাছে এক কাপ চা চাইব? নাকি আমাদের দুনিয়া পাল্টে ফেলতে চাইব? এটা আমাদের হাতে।

ইউনূসের ভাষায়, বাংলাদেশে আর কখনো যেন স্বৈরাচার’ আসন গেড়ে বসতে না পারে, সেই পথ বন্ধ করতেই এত সংস্কার করতে হচ্ছে। তো সেই স্বৈরাচারকে বন্ধ করতে হলে আমাদেরকে সব একমত হয়ে এটা করতে হবে। দ্বিমতের কোনো জায়গা এখানে (জুলাই সনদে) নাই। আমরা অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু দ্বিমত করে সমাপ্ত করতে পারব না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু আমাদের ওই লক্ষ্যটা আছে। ওই দৈত্যকে আমরা সবচাইতে বড় কাজটা দেব। যেটা আর আর কেউ কোনোদিন চাইবারও সুযোগ পাবে না, এই দৈত্যও কোনোদিন পাবে না। একবারই পাচ্ছি আমরা এই দৈত্য। এই দৈত্যকে আমাদের মনের সমস্ত আশা তার ঘাড়ে দিয়ে দেব, যে এটি আমাদের পূরণ করে দাও। সে জিনিসের দিকে আমারা যেতে চাই।

এ সময় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়াসার কারণে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ নষ্ট হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধঅবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ঝুঁকির মুখে ব্রিজ