ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই হাতে পাওয়ার আশা

চট্টগ্রামে প্রাথমিকে ৭০ ও মাধ্যমিকে ৩৫ শতাংশ বই এসেছে

ইমাম ইমু | শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছরের এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে প্রাথমিকে এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশের মতো বই এসেছে। মাধ্যমিকে এসেছে ৩৫ শতাংশের মতো বই। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই হাতে পাবে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে যেতে পারে। আরও দীর্ঘ হতে পারে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার সময়। এর প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষা কার্যক্রমে। গত বছরের জুলাইআগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পাঠ্যবইয়ে সংযোজনবিয়োজন এবং পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি হওয়ায় নতুন শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। অন্তর্বর্তী সরকার জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানোর আশ্বাস দিলেও সেটা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশোনায় সমস্যা না হয়, সে জন্য শিক্ষকদের এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবই সংগ্রহ করে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ছয় থানা শিক্ষা অফিসের মধ্যে চান্দগাঁও ছাড়া বাকি পাঁচ থানা শিক্ষা অফিসে প্রাক প্রাথমিকের শতভাগ বই এসেছে। আর ১৫ উপজেলার মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় তেমন বই আসেনি। চন্দনাইশ উপজেলা এবং পাহাড়তলী থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন বিদ্যালয়গুলো বাংলা মাধ্যমের শতভাগ বই পেয়েছে। বাকি থানা শিক্ষা অফিসের মধ্যে বেশিরভাগই চাহিদার ৪৫ থেকে প্রায় ৭০ শতাংশের মতো বই পেয়েছে।

অপরদিকে জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে মাধ্যমিকে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩ কপি। এর মধ্যে ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, মাধ্যমিক ভোকেশনাল, মাধ্যমিক বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন মিলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন। বই এসেছে প্রায় ৬৬ লাখ, যা চাহিদার ৩০ শতাংশের মতো। এরমধ্যে কেবল ষষ্ঠ ও দশম শ্রেণির সব বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির তিনটি করে বই এসেছে। চট্টগ্রামে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯০ জন। এছাড়া চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৩০৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬৭১ কপি। যা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং নগরের পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারো সমপ্রদায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় লেখা এসব বই পেয়ে থাকে। এসব বই বেশিরভাগ এসে পৌঁছেছে। এদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে এবার মোট শিক্ষার্থী ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ জন। চাহিদা ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি বই। তবে গত বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২২ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো ও সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো ১৮ কোটি ১৫ লাখ পাঠ্যবই ছাপানো বাকি। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পেয়েছে আংশিক বই। কাগজ সংকট না থাকলে দিনে ৪০ লাখ পাঠ্যবই ছাপানোর সক্ষমতা রয়েছে দেশের ১১৬টি ছাপাখানার। কিন্তু গত দুই মাস ধরে কাগজের কৃত্রিম সংকট চলছে। এ কারণে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। ছাপাখানার মালিকরা বলেন, ঈদের আগে সব বই ছাপানো হয়তো সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান আজাদীকে বলেন, প্রাথমিকের বেশিরভাগ বই এসেছে। অল্পকিছু বাকি আছে। আমাদের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ বই এসে পৌঁছেছে। আশা করছি বাকি বই কিছুদিনের মধ্যে পেয়ে যাবো। জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা আজাদীকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৬৬ লাখ কপির মত বই পেয়েছি। যা চাহিদার ৩০ শতাংশের মতো। সপ্তমঅষ্টম শ্রেণির ৩ বিষয়ে বই এসেছে। মাদ্রাসার চতুর্থ ও পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির অল্প বই এসেছে। নবমদশম শ্রেণির প্রায় সবগুলো বই পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত সময়ে বই তুলে দিতে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবগুলো বই পেয়ে যাবো আশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার সম্পত্তিতে হামলা না চালানোর আহ্বান ইউনূসের