বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি চলতি মাসের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী প্রচারণা শেষে চলতি মাসের মধ্যে একটি নতুন মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল গঠন করবে বলে ঘোষণা দেয় তারা।
রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এ মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। ছাত্র–যুবকদের নেতৃত্বে একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে জনমত গঠনে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তারা বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে জনসাধারণের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ মতামত সংগ্রহ করা এই প্রচারণার লক্ষ্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিকে একটি অনন্য উদ্যোগ অভিহিত করে তারা দেশবাসীকে দলের জন্য নাম ও প্রতীক প্রস্তাবের আহ্বান জানান, যেখানে বড় পরিসরে জনমত চাওয়া হচ্ছে। খবর বাসসের।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও চূড়ান্ত বিজয় এখনো আসেনি। আমরা কেবলমাত্র সমগ্র ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার হাসিনা ও গণভবনের পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু আমরা স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অন্যান্য উপাদানগুলো নির্মূল করতে পারিনি। সুতরাং দেশের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের পর এখনও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে ছাত্র–জনতার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারলেও আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোয় বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানগুলোকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দাবি ছিল ফ্যাসিবাদ দূরীকরণ, একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামো, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। পাকিস্তান আমলে ১৯৪৭ সালে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে দেশের মানুষ সব সময়ই নিপীড়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো ও দলগুলো জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে, তারা জনগণের এই গণআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো দলগুলো তাদের তাদের কাছে টানতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। যে কারণেই গণজাগরণের শক্তি ছাত্র–যুবকরা নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রীয় রূপকল্পকে ধারণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হাসনাত বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল কোনো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিকেন্দ্রীক এবং একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে পরিণত হওয়া উচিত নয়। আমরা এটিকে সমাজের সকল স্তরের মানুষের একটি কণ্ঠস্বরে পরিণত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই, যারা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিজেদের বঞ্চিত বোধ করে। আমরা সকল নাগরিকের কথা শুনতে চাই, আমরা সকলের আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে চাই।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০২৪ সালে আন্দোলনে নেমেছে। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে নতুন রূপে গড়তে চেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। এ মাসে যে রাজনৈতিক দলটি আসছে তা জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দল দেখতে পাব বলে আশা করছি। এটি হচ্ছে জনমত গঠনে আমাদের দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের দ্বারা গৃহীত সবচেয়ে বড় পরামর্শমূলক প্রচেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।