ফুলের রাজ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কর্নার

সীতাকুণ্ড ডিসি পার্ক

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শনিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

১৩৬ প্রজাতির লাখো ফুলে শোভিত সীতাকুণ্ডস্থ ফৌজদারহাট ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবে রয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কর্নার’। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবারের এ ফুল উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে জুলাইআগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদের উদ্দেশ্যে। এ লক্ষ্যে শহীদদের স্মরণে স্থাপন করা হয়েছে গণ অভ্যুত্থান কর্নার। গণঅভ্যুত্থান কর্নার সৃষ্টির মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের বীরত্বগাথা ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী দিনে ফুল উৎসবে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা গণঅভ্যুত্থানে শহীদের অবদান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। গণঅভ্যুত্থান কর্ণারে চট্টগ্রাম জেলার ৯ বীর শহীদের ছবিসহ নামের তালিকা ডিসপ্লেতে দেয়া হয়েছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ অনেক শহীদদের ছবি আছে এবং গণঅভ্যুত্থানের অনেক চিত্র প্রর্দশনীতে তুলে ধরা হয়েছে।

চুয়েটের শিক্ষার্থী মো. মিনহাজ ফুল উৎসবে এসে জানান, প্রতিবারই তিনি এই ফুল উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। তবে এবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে শহীদ কর্নার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এবার নতুন স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস এই উৎসবে অনুভূত হচ্ছিল বলে জানান তিনি।

চবি শিক্ষক শাহরিয়ার ইমশিয়াত ফুল উৎসবে জুলাইয়ের থিম দেখে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে এই তরুণেরা যেভাবে নিজেদের ভেতর লালন করছে তা আশাব্যঞ্জক। এই অভ্যুত্থানের প্রেরণাই একটি পুষ্পিত সুন্দর সমাজ তৈরি করবে। উৎসবে জুলাইকে স্মরণ করাকেও ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন সবাই।

সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সীতাকুণ্ডের ফুল উৎসবে দর্শনার্থীরা দেখতে পাচ্ছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নামের নামকরণ করা ফ্রেম, ব্যানার, গ্রাফিতিতে আয়োজকরা ফুটিয়ে তুলেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে। গণঅভ্যুত্থান কর্নারে সাজানো হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের নানা চিত্রে। সেসব চিত্রে ফিরে ফিরে আসে দ্রোহবেদনাক্ষোভের সেই দিনগুলো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থান শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারলে আবু সাঈদওয়াসিমসহ সব শহীদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। দেশ ও সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুল উৎসব। চট্টগ্রামে তৃতীয় বারের মতো এ আয়োজন। এটি আনন্দ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সমাবেশ। তিনি গণঅভ্যুত্থান কর্নার প্রসঙ্গে বলেন, পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এ ফুলের রাজ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কর্নার নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমি মনে করি। এর মাধ্যমে একাত্তরের প্রেরণাকে ধারণ করে আমরা ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় নিয়ামক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। একাত্তরে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছি, আর চব্বিশের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছি।

ফুল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে ফ্রেমবন্দি করে সবার মাঝে স্মৃতি হিসেবে তুলে ধরার এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। একাত্তরের মুক্তিকামী জনতার প্রতিবাদী মনোভাবের ধারাবাহিকতায়ই আমদের জুলাই বিপ্লবের প্রতিফলন। জুলাই বিপ্লবের এই কর্নারটি আমাদের ছাত্রদের মাঝে অন্যায় ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠার এক অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আমি আশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবৈধ সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ে রং ছড়াল পিঠা ও সাংস্কৃতিক উৎসব