ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না মোঃ সাবিদুল ইসলাম সাজ্জাদের (২২)। পড়ালেখার পাশাপাশি ফুটবল খেলাতেই বেশি সময় ব্যয় করতেন সাজ্জাদ। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বখাটে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান তিনি। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগরী মেট্রোপলিটন পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে দোহাজারী আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সাজ্জাদ। এছাড়া মেয়র গোল্ডকাপেও আলকরণ ৩২নং ওয়ার্ড টিমের পক্ষেও টুর্নামেন্টে অংশ নেন সাজ্জাদ। তাছাড়া নিজ এলাকা দোহাজারীসহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়েও বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতেন। সর্বশেষ বান্দরবানে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টেও অংশ নেন এবং গতকাল শুক্রবার ছিল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ম্যাচ। কিন্তু বখাটে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে খুন হওয়ায় টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া হয়নি। সাজ্জাদ গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র।
সাজ্জাদের বড় ভাই হেলাল মাহামুদ জানান, তার ভাই সাজ্জাদ ছিল অত্যন্ত ধার্মিক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতেন। গত রমজানে সাজ্জাদ মসজিদে ইতেকাফ সম্পন্ন করেন। তিনি বলেন, সাজ্জাদের স্বপ্ন ছিল একজন প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার হওয়া। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল টিমে খেলার স্বপ্ন সে লালন করতো। পড়ালেখার পাশাপাশি সাজ্জাদ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে অনেকবার পুরস্কৃতও হয়েছে। সাজ্জাদ সাবেক জাতীয় ফুটবলার শওকত খানের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল এবং দোহাজারী আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলতো। কিন্তু পরিপূর্ণ ফুটবলার হয়ে ওঠার আগেই বখাটে বন্ধুর হাতে তাকে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো।
তিনি আরো জানান, বন্ধু হৃদয়ের সাথে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বখাটে রবিউল ইসলামের একটি বিরোধ মীমাংসা করার উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার দোহাজারী শাহী জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে সাজ্জাদ রাত সাড়ে ৮টার দিকে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিওসি মোড় এলাকায় যায়। এসময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বখাটে রবিউল ছুরি বের করে তার ভাই সাজ্জাদের বুকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে সাজ্জাদ মাকে একবার দেখার আকুতি জানিয়েছিল।
গতকাল দুপুরে দোহাজারী বারুদখানাস্থ সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা, ভাই, বোনসহ আত্মীয়স্বজন সবাই বিলাপ করছেন।
ঘটনার সময় সাজ্জাদের সাথে থাকা ইমন নামে একজন জানান, বিওসি মোড় এলাকায় যাওয়ার পরপরই রবিউলের সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রবিউল কোমর থেকে ছুরি বের করে সাজ্জাদের বুকে বসিয়ে দেয়। এসময় সাজ্জাদকে উদ্ধার করে দ্রুত দোহাজারী গ্রীন হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখান থেকে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।
ময়না তদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর সাজ্জাদের লাশ দোহাজারীতে এসে পৌঁছালে মা, ভাই, বোন, পাড়া প্রতিবেশিসহ আত্মীয়স্বজনের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। সাজ্জাদকে শেষবারের মতো দেখতে বাড়িতে ভিড় করছিল সবাই। এসময় সবাই বলছিল সাজ্জাদের হত্যাকারী যাতে দ্রুত গ্রেপ্তার হয় এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি পায়। গতকালই বাদে এশা নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।