চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্তমান পর্ষদের ৩৯তম সাধারণ সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ফুটপাত–সড়ক দখলকারীদের পাশাপাশি যারা যত্রতত্র ময়লা ফেলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য একজন নির্দিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া সরকারি অন্যান্য সংস্থার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে আবারো অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন। ফুটপাত উদ্ধার শেষে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হবে বলেও ঘোষণা দেন মেয়র। রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরবাসীকে রাস্তায় নিরাপদে হাঁটার অধিকার ফিরিয়ে দিতে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। ভালো কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। উচ্ছেদ কার্যক্রমকে ব্যর্থ করতে নানা রকম বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে ঢাকার একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ সবাই উচ্ছেদ অভিযানে খুশি। ঈদের সময় একটু নমনীয়তা দেখিয়েছি। এখন আবারো ফুটপাত–সড়ক উদ্ধারে অভিযান চলবে। তিনি বলেন, অভিযানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি সংস্থার সম্পৃক্ততা বাড়াতে যোগাযোগ চলছে। একবার উচ্ছেদের পর পুনর্দখল ঠেকাতে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একজন ডেডিকেটেড ম্যাজিস্ট্রেট দিব যার কাজ থাকবে শুধু যাদের বাসা–দোকান–অফিসের সাথে ময়লা পাওয়া যাবে তাদের জরিমানা করা। ফুটপাত রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই।
আসলে নিজস্ব স্থাপনা, বাড়ি, আঙিনা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানির আধার বিনষ্ট করা এলাকাবাসীর নাগরিক দায়িত্ব। বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত নাগরিক বলতে কোনো দেশের, নগরের বা শহরের অধিবাসীকে বোঝানো হয়। এর অর্থ ব্যাপকতা অর্থাৎ কোন রাষ্ট্রে বা দেশে বর্তমানে বসবাসরত সকল অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। সাধারণভাবে প্রত্যেক নাগরিকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক বলতে একজন ভালো নাগরিককে বোঝায়। প্রথমত মানুষটাকে সব অর্থে ভালো, সৎ ও দায়িত্ববান; নিজের এবং সপরিবারে, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে হওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ভালো বা সুনাগরিক তাকেই বলা যায়ু যার অন্যের প্রতি যথাযথ সম্মান এবং সুদৃষ্টিবোধ আছে বা থাকে। একজন ভালো নাগরিকের সূচনা বা চর্চা পরিবার ও স্কুল থেকেই শুরু যেমন ক্লাস রুমে নিজের পড়াটা তৈরি করা, শিক্ষক এবং বড়কে শ্রদ্ধা করার বিষয়গুলো যে কেউ তার স্কুল জীবনের শুরুতে চর্চা করার ও বোঝার সুযোগ পায়। দায়িত্বও পায়। অনেকের মতেই একজন মানুষ তার স্কুল জীবনের শুরুতে কেমন আচরণ করে এবং কি শেখে, সেটা নির্ধারণ করে দেয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তার নাগরিক ভূমিকা কি অথবা কেমন হতে পারে। এ মতের পক্ষে মত বা দ্বিমত যুক্তি, তর্কও আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক হঠাৎ করে হওয়া সম্ভব না, এটাও ঠিক। পরিবেশ–পারিপার্শ্বিকতার নানা বিষয়ও একজন দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দায়িত্ব পালনকালে নাগরিকদের অধিকতর কর্তব্য বিষয়ে সচেতন হতে হয়। আমাদের দেশে বর্তমান অগনিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে নিপীড়িত করছে। এ সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, কিছু কিছু দায়িত্ব নাগরিকের উপর বর্তায়। তাই সকল নাগরিককে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হলে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। গঠনমূলক পরিকল্পনা নিয়ে নিজের পরিবারে, নিজের সমাজে, নিজ অঞ্চলে এবং সমগ্র দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। আমরা যদি ভাল হই, যদি সৎ হই, দেশ প্রেমিক হই, দেশকে যদি মায়ের মতো ভালোবাসি, নিঃসন্দেহে পৃথিবীর মানচিত্রে এ দেশের নাগরিদের কল্যাণে এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে সন্দেহ নেই। আমরা অবশ্যই পারবো যদি দেশের সকল নাগরিক নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে আপামর জনসাধারণের কথা ভেবে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উজাড় করে শুধু দেশের জন্য এবং দশের জন্য কাজ করতে পারি অবশ্যই দেশে শান্তি আর সুখ ও কল্যাণ ফিরে আসবে। এজন্য সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করতে হবে।
অন্যদিকে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধেও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।