বান্দরবান পৌরসভা এলাকায় পরিকল্পিত ফুটপাত না থাকায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে পৌরবাসীর। লক্ষাধিক মানুষের এ শহরে ফুটপাতের পরিমাণ মাত্র ১.৩ কিলোমিটার। অপরিকল্পিত নগরায়ণের পর্যটনের এ শহরে পরিকল্পিত কোনো ফুটপাতই নেই। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণ এবং ভ্রমণকারী পর্যটকেরাও। ফুটপাত না থাকায় সড়কের ওপরে চলাচলের কারণে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ১৯৮৪ সালের ১৩ মার্চ গঠিত বান্দরবান পৌরসভার আয়তন ১৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার। পর্যটন শহর গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল রিসোর্ট’ সহ অসংখ্য বাণিজ্যিক স্থাপনা। পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে রয়েছে ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাদ্রাসা, ৯টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৫টি লাইব্রেরি, ৩টি বাস–স্টেশন, ১টি টার্মিনাল, ৪টি কলেজ, ৪টি হাসপাতাল, ৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র/ক্লিনিক, ৮০টি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান’সহ সরকারি–বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শহরের মধ্যখানে দেশে উৎপত্তি খরস্রোতা সাঙ্গু নদী বয়ে গেছে সাড়ে ৫ কিলোমিটারের মত। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরে পরিকল্পিত ফুটপাত না থাকলে সড়কের দুপাশে থাকা জায়গাগুলো দখল করে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। পৌর এলাকার ওয়াপদা এলাকায় সড়কের পার্শ্ববর্তী গোটা জায়গায় এলোমেলো ভাবে বিদ্যুতের খুঁটি এবং বাঁশ কাঠ রেখে পায়ে হাঁটার জায়গাটি সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছে। কালেক্টরেট স্কুল সড়কে কংক্রিট, পাথর রেখে জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। পায়ে হেঁটে চলাচলের পথগুলো নির্মাণ সামগ্রী এবং ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ির খাবারের দোকান খুলে রেখেছে।
হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, বান্দরবান একটি পর্যটন শহর। কিন্তু এখানে পৌরসভার জনসাধারণ ও ভ্রমণকারী পর্যটকদের চলাচলের জন্য পরিকল্পিত কোনো ফুটপাত নেই। দৃশ্যমান ফুটপাত বলতে হিলবার্ড ধনেশ পাখির মোড় থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ এবং এলজিইডি অফিস মোড় থেকে সার্কিটহাউজের প্রবেশমুখ পর্যন্ত রাস্তার একপাশ পথচারীদের হাঁটার আলাদা পথ রয়েছে। এটি পৌরবাসীর জন্য শুধু দুর্ভাগ্য নয়, লজ্জারও। পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধন এবং দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তত সার্কিটহাউজ মোড় থেকে মেম্বার পাড়া হয়ে থানচি বাসস্ট্যান্ড এবং বাসস্ট্যান্ড থেকে ওয়াবদাব্রিজ হয়ে ধনেশ পাখি মোড় পর্যন্ত ফুটপাত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে গোটা পৌর শহরকে পরিকল্পিত ফুটপাতের আওতায় আনা প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দার শাহাদত হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব অভিযোগ করে বলেন, প্রখম শ্রেণির পৌরসভায় জনসাধারণ চলাচলের ফুটপাত নেই এটি অবাক করা বিষয়। পর্যটন নগরী বান্দরবানে ছোট্ট জেলা শহরটি সাজাতে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠার আগেই মেম্বার পাড়া থেকে থানচি স্টেশন হয়ে হিলবার্ড ধনেশ পাখি মোড়, ট্রাস্টব্যাংক মোড় থেকে হাসপাতাল নতুনব্রিজ পর্যন্ত এবং সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে স্বর্ণমন্দির ব্রিজ পর্যন্ত দ্রুত পরিকল্পিত ফুটপাত গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি। এতে পর্যটন শহরের সৌন্দর্য বাড়বে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, পৌরসভায় পরিকল্পিত কোনো ফুটপাত নেই। এডিবি প্রকল্পের আওতায় পরিমাণ মাত্র ১.৩ কিলোমিটারের মত পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের ওপরে টাইলস লাগানো হয়েছিল, সেটিই মূলত দৃশ্যমান ফুটপাত বান্দরবান পৌরসভায়। পৌর এলাকায় ফুটপাত সমপ্রসারণে নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। তবে আগামীতে পৌর এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে উদ্যোগ নেয়া হবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে।











