ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দায়িত্বশীল কর্মপন্থা অবলম্বন প্রয়োজন

| শনিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

হকারদের নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলার কথা আমরা শুনেছি। হকারদের নিয়ে এই সমস্যা নতুন নয়। বরং বলা চলে বহু পুরাতন। হকারদের উচ্ছেদ করা হয়, আবার ওরা দখলে যায়। কিন্তু নগরবাসীর পথ চলাচল নিশ্চিত ও নগরীকে দুঃসহ যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা যেমন দরকার, তেমনি ফুটপাতে সকল প্রকার অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা অত্যন্ত জরুরি। পথচারীদের স্বার্থে অনেক সময় নানা ধরনের সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায়। এখন কথা হচ্ছে শুধু সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না জনস্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি।
গত ১৯ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ফুটপাত ছেড়ে রাস্তাতেও হকার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগরীর ব্যস্ততম সবকটি সড়কের ফুটপাত হকারদের দখলে। এসব ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী চুক্তিতে ভাসমান হকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া এসব দোকান থেকে সমিতির নামে দৈনিক ১০ টাকা হারে চাঁদাও আদায় করা হচ্ছে। আদায়কৃত চাঁদা থেকে ভাগ পান সংশ্লিষ্ট সবাই। কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের সুযোগ থাকায় রাজনৈতিক বলয়ের হকার নেতারা দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করছে। ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তার বিশাল অংশও হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন আর ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারছে না। ঝুঁকি নিয়ে সড়কেই হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের।
এ কথা বলা জরুরি যে, ফুটপাতগুলো দখলে থাকায় যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষজন। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া। সাধারণত হকাররাই ফুটপাতগুলো দখল করে রাখে। এজন্য ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত রাখা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকারত্ব এখন দেশের একটি বড় সমস্যা। আগেকার দিনে বেকারত্ব বলতে প্রধানত বোঝাতো মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকদের কর্মসংস্থানের অভাব। এখন বেকারত্বের হার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। ফুটপাতে হকারদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি হওয়া বেকারত্বেরই প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়। যারা আজ ছিঁচকে চোর, মাদকদ্রব্য বহনকারী, রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারী, পকেটমার নানাভাবে খুনখারাবি করছে তাদের অধিকাংশের উদ্ভব বেকারত্বের কারণে। তারা নানা ধরনের অপরাধ করে জীবিকা অর্জন করছে।
সেজন্য এ প্রশ্নও ওঠা স্বাভাবিক, হকারদের উঠিয়ে দিলে তারা কি করে খাবে? তাদের মধ্যে অপরাধের মাত্রা বাড়বে। উচ্ছেদের বদলে তাদের পুনর্বাসিত করা যায় কিনা, তা ভাবতে হবে। শহরে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। মফস্বল থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এরাই জায়গা না পেয়ে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে টাকার বিনিময়ে ফুটপাতে দোকান বসাচ্ছে। সমন্বয় ও আলোচনার মাধ্যমে এদের নিজ নিজ এলাকায় পুনর্বাসিত করা যায় কিনা সেই বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত। ফুটপাতে যারা দোকান বসিয়েছেন, তাদের উঠিয়ে দিলে তারা যাবে কোথায়। তাদের জন্য ২ থেকে ৩টি সড়ক খালি রাখতে হবে, যেন ওই সড়ক দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে না পারে। সেখানেই হকারদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে। তাহলে অবৈধভাবে ফুটপাত দখলের হাট থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আজাদীকে বলেন, নগরবাসীর অধিকার রক্ষা আমার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। তাই হকারদের আমি বলে দিয়েছি, বসতে হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বসতে হবে। হকারদের থেকে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়টিও স্বীকার করেছেন প্রশাসক। তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে স্থানীয় তথাকথিত কিছু নেতা কর্মী দলের নাম ভাঙিয়ে এ কাজ করছে। এদেরকে জীবনে কখনো আমি আন্দোলন সংগ্রামে দেখিনি। এদের অনেকে আবার আড়ালে আমার বিরুদ্ধে হকারদের উস্কানি দিচ্ছে, এ খবরও আমার কাছে আছে। আমার বিরুদ্ধে এসব করে যে সুবিধা হবে না, তা তারা বুঝতে পারছে না। আমার কথা হলো- এ শহরকে মানবিক শহরে পরিণত করতে হলে আমাদের সকলকে জাগতে হবে। আমি সেই জাগানিয়ার কাজটি করে চলেছি।
আসলে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হলে উভয়পক্ষ থেকেই দায়িত্বশীল কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। স্রোতের মতো হকাররা আসতে থাকবে আর তারা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, তারপর পুনর্বাসনের দাবি তুলবে- এটি কখনও বাস্তবসম্মত নয়। এ জন্য সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি সুসমন্বিত পন্থায় এগিয়ে যেতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে