ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ও পুনর্দখল রোধে কঠোর হতে হবে

| শনিবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি অসামান্য কাজের উদ্যোগ নিয়ে নগরবাসীর প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, নগরের পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের পর পুনর্দখল রোধে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে উচ্ছেদকৃত জায়গায় ফুলের টব স্থাপন করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি সড়ক ও ফুটপাতে দোকানের কোনো পণ্য রেখে ব্যবসা না করার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। ডা. শাহাদাত বলেন, হকারদেরকে কখনো স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ আমি করি না। কারণ তাদেরও পরিবার আছে। কিন্তু এখানে যারা, তাদের প্রত্যেকের দোকান আছে। দোকানদাররা দোকানের ভিতরে মাল রাখতে পারে। কিন্তু তারা ফুটপাতও দখল করে ফেলেছে, রাস্তাও দখল করে ফেলেছে। দোকানদারদের দোকানের ভিতরে মাল রাখতে পারে। বেশ কয়েকদিন ধরে এটা অবজার্ভ করছিলাম। আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। দেখলাম সমস্ত ফলকাঁঠাল, আম, তাল যতকিছু আছে পুরা রাস্তার অর্ধেকজুড়ে এরা দখল করে থাকে। যার কারণে এখানে যানজট লেগে থাকে। পথচারীদের চলাচল ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, রেলপথে যারা চট্টগ্রামের বাইরে থেকে বিদেশ থেকে এই শহরে আসে তারা এই পথ দিয়ে যায়। এতে চট্টগ্রামের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই জায়গার সৌন্দর্য রক্ষা করতে হবে। আজ গাছ লাগিয়েছি। এখানে শ্রমিক নেতারা আছেন। সৌন্দর্য রক্ষার বিষয়ে তারাও ঐক্যবদ্ধ। দোকানদারদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, কোনো দোকানদার ফলমূল বা পণ্য ফুটপাতে ডিসপ্লে করতে পারবেন না। সমস্ত পণ্য দোকানের ভেতরেই রাখতে হবে। লোডিং ও আনলোডিংয়ের কাজ রাত ১১টা থেকে সকাল ৯ টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এ সময় গাছের টবগুলো দোকানদাররা এক পাশে সরিয়ে রাখবেন, কাজ শেষে আবার সঠিকভাবে বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারি না। সিটি মেয়র হকার উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগামী ও তৎপর। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা ও জঞ্জালমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি সিটি কর্পোরেশন থেকে নানা সময়ে অনেক বার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। মাসের পর মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও ফুটপাত যেমন ছিল তেমনই আছে। যদিও সিটি মেয়রের ভূমিকাকে আমরা প্রশংসা করছি। ফুটপাত মুক্ত হওয়ার পরিবর্তে নতুন করে দখল চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।

সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তাঁরা বলেন, ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না। কেউ কেউ ফুটপাতের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে হকারদের বসার জায়গা করে দেয়ার পরামর্শ দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে নানা দেশে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তার ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য। কাজেই মানুষের হাঁটাচলার জন্য খুব অল্প জায়গা অবশিষ্ট আছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।’ শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করতে হবে। সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ও পুনর্দখল রোধে প্রশাসনকেও কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে