ফুটপাত দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বসানো দোকানে কী ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে সে প্রশ্ন তুলেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। একইসঙ্গে কোনো চাপে নত না হয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
নগরের লালদীঘি পাড়স্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির বর্তমান পর্ষদের ৩৭তম সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন মেয়র।
সভায় উপস্থিত পিডিবি’র প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ফুটপাতে অবৈধভাবে দোকান বসানো ব্যক্তিরা কী ভাবে বিদ্যুত সংযোগ পেয়েছে? আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রতিমাসে কোটি টাকা বিল দিই। এরপরও আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের বিল বাকি থাকলে লাইন কেটে দেন। কোনো বাসায় বিদ্যুতের লাইন দিতে গেলে অনেক দলিল খুঁজেন। কিন্তু ফুটপাত দখলকারীরা কীভাবে বিদ্যুতের লাইন পায়?
এসময় মেয়র ঘোষণা দেন, অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুতের লাইন পেলে কেটে দিব। জেনারেটর পেলে জব্দ করব। কয়েকদিন আগে আগ্রাবাদে দেখলাম ঝুলন্ত তারের জঞ্জালে আগুন জ্বলছে। পিডিবির বিদ্যুতের পিলারে যাতে ডিশ–ইন্টারনেটের ক্যাবলের জঞ্জালে পরিণত না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মেয়র বলেন, নগরবাসীর রাস্তায় নিরাপদে হাঁটার অধিকার ফিরিয়ে দিতে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। আমি জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করেই মাঠে নেমেছি। কোনো প্রভাব–প্রতিপত্তি বা চাপ দিয়ে আমাকে থামানো যাবে না। কোনো চাপে আমি নত হব না, উচ্ছেদ অভিযান চলবে। তিনি বলেন, হকাররা ব্যবসা করুক, এতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ফুটপাত দখল করে কেন হকার বসবে? হলিডে মার্কেট করে দিব ওখানে শুক্র–শনিবার হকাররা ব্যবসা করুক। কিছু কুচক্রী মহল ছাড়া রাস্তা–ফুটপাত উদ্ধার হওয়ায় সবাই খুশি।
ফুটপাত রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, ফুটপাত রক্ষায় পুলিশ, র্যাব ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আমাদের কোনো ফোর্স নেই। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমরা যেখানে উচ্ছেদ করছি সেখানে সংশ্লিষ্ট থানা একটু মনিটরিং করলে ভয়ে আর কেউ বসবে না। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ছয় মাসের মধ্যে শহরের চেহারা বদলে যাবে। অপরাধও কমে যাবে। তিনি বলেন, নিউমার্কেট মোড়ে দেখেন, অভিযান চালানোর পর ছিনতাই কমে গেছে। আপনাদেরকে বলব, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যাতে আমাদের দমাতে না পারে।
মেয়র বলেন, নিউ মার্কেটে কী একটা বিশ্রি অবস্থা। অভিযান চালাতে গিয়ে দখলদারদের হামলায় আমার ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও পুলিশ আহত হয়েছে। হামলাকারীদের প্রতি কোনো অনুকম্পা নেই। অনেকে বলে হকার পুনর্বাসন। জহুর হকার মার্কেটতো আমরাই করেছি। আমি তখন ছাত্রনেতা ছিলাম। হকার পুনর্বাসনে কোনো সুফল আসেনি। পুনর্বাসন করবেন, এরা দোকানগুলো বিক্রি করে আবার রাস্তায় চলে আসবে। এখন আর বাজারে যেতে হয় না। পথে–ঘাটে সবখানে বাজার হয়ে গেছে এখন। অনেকে বলে ফুটপাতে গরীব মানুষ বসুক, ব্যবসা করুক। ফুটপাত দখলের কারণে মানুষ দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের পরিবারের দায়িত্ব কি কেউ নেন? আমাদেরকে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ নয়। এজন্য ট্রাফিক বিভাগকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে নগরের সৌন্দর্যের কথাও ভাবতে হবে। পিডিবির অনেক বিদ্যুতের খুঁটি নালায় পড়েছে যে কারণে জলাবদ্ধতা হয় এগুলো সরাতে হবে। রাস্তার মাঝখানে পড়ায় যানজট হয়। এগুলো সরাতে হবে। ওয়াসাকে অনুরোধ করব পানির লাইনে লিকেজ হয়ে যাতে রাস্তা নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সিডিএ’কে বলবো জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের গতি বাড়াতে হবে। ভবন নির্মাণের অনুমতির ক্ষেত্রে চসিকের অনুমতি গ্রহণও বাধ্যতামূলক করলে কেউ ফুটপাত–রাস্তা দখল করে বাড়ি করতে পারবে না ফলে যানজট কমবে। তিনি বলেন, নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে অনেক কার্যক্রম নিয়েছি। এখন কেউ যত্রতত্র ময়লা ফেললে কে ফেলেছে দেখব না; যার প্রতিষ্ঠান–বাসার সামনে ময়লা পাব তাকে জরিমানা করব।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সব ধরনের রিকশা বন্ধ করে সোলার চালিত গাড়ি চালু করার প্রস্তাব দেন। মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম নিউ মার্কেট মোড়ে উচ্ছেদ অভিযানকালে হামলার ঘটনায় মামলার কোনো আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান।
ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপারের স্বার্থে নগরজুড়ে জেব্রা ক্রসিং গড়ে তুলতে হবে। নগরে যেসব নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে সেগুলোর সামনে বিল্ডিং কোড অনুসারে জায়গা ছাড়া হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাটারি রিকশা বন্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ দরকার।
পিডিবির প্রতিনিধি উপ–সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মুসা জানান, ব্যাটারি রিকশা এবং অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কমাতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পিডিবি। ভবিষ্যতে তারের জঞ্জাল কমাতে পিডিবির পোল ব্যবহার ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
