ফিশিং ট্রলারে বাড়ছে রোহিঙ্গা মাঝিমাল্লা

জড়াচ্ছে নানা অপরাধে, সমস্যায় স্থানীয় জেলেরা

টেকনাফ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফসহ কক্সবাজারে ফিশিং ট্রলারে রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বোট মালিকরা স্থানীয় জেলেদের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দিচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে অভাব-অনটনে পড়েছেন স্থানীয় জেলেরা। ফিশিং বোটে চাকরি হারিয়ে অনেক স্থানীয় জেলে কোন কাজকর্ম না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন করছেন।
টেকনাফের জেলে নেতা শফিউল আলম ও মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন নাফ নদী দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে এমন খবরে নাফ নদীতে মাছ ধরা ২০১৭ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় ১০ হাজার জেলে তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছে। তাদের একটি মাত্র দাবি- নাফ নদীতে রাতের পরিবর্তে অন্তত দিনের বেলায় হলেও মাছ শিকারের অনুমতি প্রদান করা।
এ বিষয়ে গত ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে জেলেরা। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। এদিকে নাফ নদীতে মাছ শিকারের সকল বোট নাফ নদী ছেড়ে পশ্চিম এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মৎস্য আহরণ করছে। উক্ত বোট মালিকরা স্থানীয় জেলেদের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লা দিয়ে মাছ শিকার করছেন।
রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লারা মাছ শিকারের নামে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে মাছের সাথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট র‌্যাব-১৫ বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার খুরুশকুল মাঝিরঘাট থেকে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ দুই জন রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লা ও একটি ফিশিং ট্রলার আটক করে। তারা হচ্ছে উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বশির ও আব্দুল মজিদ।
এছাড়া ২০ সেপ্টেম্বর টেকনাফের কোস্টগার্ডের সদস্যরা বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে ৭ রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লাসহ ৫ লাখ ইয়াবা ও ফিশিং ট্রলার আটক করেন। ৯ জুলাই ৯৩ হাজার ইয়াবাসহ রামুর হিমছড়ি থেকে একজন জেলেসহ একটি ফিশিং বোট আটক করে র‌্যাব-১৫। এভাবে প্রতিনিয়ত ইয়াবা ভর্তি ফিশিং ট্রলার আটক হচ্ছে।
রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লারা শুধু ইয়াবা বহন নয়, মালয়েশিয়ায় মানবপাচার, ফিশিং বোটে ডাকাতি, খুন সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী- দক্ষিণ ও পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে শুধু টেকনাফের তালিকাভুক্ত ১১৫৪টি ফিশিং বোট ও ৭৮৮৩ জন স্থানীয় জেলে রয়েছে।
স্থানীয় জনগণের তথ্য মতে, টেকনাফে তালিকাভুক্ত ছাড়াও অনেক ফিশিংবোট রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়- নাম, ঠিকানা ও নাম্বার থাকলে মানব ও ইয়াবা পাচার করা যায় না।
স্থানীয়রা জানায়, টেকনাফ ফিশিং বোট মালিক ও মাঝি-মাল্লাদের নতুন করে তালিকা প্রণয়ন করে যাচাই-বাছাই করা হলে অনেক খবর বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বরত অপারেশন অফিসার লে. মো. শোয়েব জানান- নিবন্ধিত জেলে ছাড়া কোনো রোহিঙ্গা মাছ ধরতে পারবে না।
টেকনাফ কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. আনোয়ারুল হক বলেন, নিবন্ধিত জেলে ছাড়া কোনো রোহিঙ্গা মাছ ধরা এবং শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।
এ বিষয়ে ফিশিং বোট মালিক সমিতি ও জেলে সমিতির সাথে আলোচনা করব। প্রয়োজনে বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকদলপুর গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনে ইউএনও
পরবর্তী নিবন্ধজামিন পেলেন রিয়া