দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা নিয়ে চারদিকে হাহাকার চলছিল। তখন অন্ধকারে আলোর দিশারি হয়ে এগিয়ে আসেন এক তরুণ চিকিৎসক। তিনি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় মাত্র ১৬ দিনে গড়ে তোলেন দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। নাভানা গ্রুপের সহায়তায় সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় ৬০ শয্যার এই হাসপাতালটি প্রস্তুত করেন হাসপাতালটির উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। স্বেচ্ছাসেবী একদল তরুণ-যুবককে সাথে নিয়ে ২১ এপ্রিল থেকে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। জনগণের দেওয়া অর্থে পরিচালিত এ হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে চার মাসে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গযুক্ত ১৬১২ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। পরে রোগী কমে গেলে সেপ্টেম্বরে এর সেবা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই ফিল্ড হাসপাতাল এবার রূপ নিচ্ছে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে। আগের মতো ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার হাত ধরেই চালু হবে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালটি। তবে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আসছে। ফিল্ড হাসপাতাল জনসাধারণের অর্থায়নে পরিচালিত হলেও পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের সার্বিক দিক দেখভালের দায়িত্ব থাকছে ২১ সদস্যের একটি ট্রাস্ট্রি বোর্ড। ট্রাস্টি বোর্ডই হাসপাতালের অর্থায়নের বিষয়টি দেখভাল করবে। অর্থায়নে নাভানা গ্রুপের সাথে আলোচনা চলছে। বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানালেন ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি জানান, একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত এ হাসপাতাল হবে সম্পূর্ণ অলাভজনক। মুনাফার উদ্দেশ্যে নয়, রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেওয়াই হবে এ হাসপাতালের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে ফিল্ড হাসপাতালে একটি বৈঠক হয়েছে। বিদ্যুৎ বড়ুয়া ছাড়াও বৈঠকে নাভানা গ্রুপের জিএম আরফাতুল ইসলাম, এজিএম আফজাল নাজিম ও গ্রুপের প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যমান ফিল্ড হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরের বিষয়ে বৈঠকে এক প্রকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন নাভানা গ্রুপের এজিএম আফজাল নাজিম। তিনি বলেন, পেপারলেস হাসপাতাল হিসেবে দেশে প্রথম সফটওয়্যার বেইজড হাসপাতাল হবে এটি। শেখ (বঙ্গবন্ধু) পরিবারের এক সদস্যের নামে হাসপাতালটির নামকরণে প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে এর নাম হবে ‘শেখ কামাল হাসপাতাল-চট্টগ্রাম’। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এটির কার্যক্রম চালু এবং ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে যা থাকছে : প্রাথমিকভাবে ৬০ শয্যা নিয়ে শুরু করা হবে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। বিদ্যমান ভবনের দ্বিতীয় তলায় হাসপাতালের কার্যক্রম এবং নিচতলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ল্যাব সুবিধা থাকবে। শুরুতে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা রাখা হলেও পরবর্তীতে সব ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে এই ল্যাবে। থাকছে ৯ জন চিকিৎসকের চেম্বারও। পর্যায়ক্রমে এটি ৮ তলা ভবন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন নাভানা গ্রুপের এজিএম আফজাল নাজিম।
প্রথম দিকে জরুরি বিভাগের সেবা, মেডিসিন বিভাগ এবং সার্জারি সংক্রান্ত মিনি অপারেশনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। অবশ্য, গাইনী বিভাগের নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থাও থাকছে বলে জানান ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। প্রাথমিকভাবে ১০/১৫ জন চিকিৎসক এবং রোগীর অনুপাত অনুযায়ী নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে।
অনলাইন বেইজড সেবা : পেপারলেস হিসেবে এই হাসপাতাল হবে দেশের প্রথম অনলাইন বেইজড হাসপাতাল। প্রথমবার একজন রোগীকে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। ওই কার্ডে রোগীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। পরবর্তীতে শুধু ওই কার্ড সঙ্গে নিয়ে গেলেই চলবে। কার্ডটি কম্পিউটারে দিলেই রোগীর যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। এতে করে কোনো রোগীকে ব্যাগ ও ফাইল নিয়ে ছুটোছুটি করতে হবে না। এর মাধ্যমে দেশের প্রথম অনলাইন বেইজড হাসপাতালের যাত্রা শুরু করার কথা জানালেন হাসপাতালটির প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ও নাভানা গ্রুপের এজিএম আফজাল নাজিম। মুনাফা নয়, অল্প টাকায় রোগীদের কোয়ালিটি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই এ হাসপাতালের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তাঁরা।