ফিল্ড সার্ভে শুরু, খোঁজা হচ্ছে ডিপোর জায়গা

ডিপোর জন্য প্রয়োজন ৫০ একর ভূমি মনোরেলের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরে মনোরেল নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ফিল্ড সার্ভে গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। আগামী সাতআট মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে এ সার্ভে। এ সার্ভের মাধ্যমে দুটো বিষয় যাচাইবাছাই করা হবে। প্রথমত মনোরেলের জন্য একটি ডিপো নির্মাণে জায়গা বাছাই করা হবে। এছাড়া মনোরেলের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত রুটগুলো এ মুহূর্তে বাস্তবসম্মত কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। প্রস্তাবিত মনোরেলের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মনোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তবে সম্ভাব্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠান ‘আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়াম’। সরকারিবেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় মনোরেল নির্মাণ প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করা হবে এনএএস ইনভেস্টমেন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্টের মাধ্যমে। গত ১ জুন চসিক ও ‘আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়াম’এর মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) হয়েছে।

জানা গেছে, সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর সিটি মেয়র গত ২৫ জুন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) একটি ডিও লেটার দেন। এর প্রেক্ষিতে বিডার চেয়ারম্যান গত ১০ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বাস্তবায়নের জন্য তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে বলেন। এছাড়া ‘আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়াম’ সহযোগিতার জন্য সিটি কর্পোরেশনও একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করেছে।

এদিকে গতকাল সকালে ‘আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়াম’ এর প্রতিনিধিরা নগর ভবনের টাইগারপাস অস্থায়ী কার্যালয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফিল্ড সার্ভে শুরুর বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এবং আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের প্রধান প্রতিনিধি কাউসার আলম চৌধুরী। এর আগে গত জুনে চসিকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরাম।

ডিপোর জন্য প্রয়োজন ৫০ একর ভূমি : সংশ্লিষ্ট সূত্রে সূত্রে জানা গেছে, মনোরেল এর জন্য একটি ডিপো নির্মাণ করতে হবে। যেখানে ওয়ার্কশপ ও অফিস থাকবে। ডিপো’র জন্য প্রায় ৫০ একর জায়গা প্রয়োজন। আবার ডিপোটি এমন জায়গায় হতে হবে যেখান থেকে মনোরেলের মূল রুটগুলো কাছাকাছি। তাই ফিল্ড সার্ভের মাধ্যমে ডিপোর জায়গা খুঁজে বের করা হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাট, চসিকের ১ নং ওয়ার্ডের নন্দীরহাট, পতেঙ্গা এবং কাট্টলী, প্রাথমিকভাবে ডিপো নির্মাণের জন্য এ চারটি এলাকা থেকে জায়গা বাছাই করা হবে। বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ডিপোর জন্য ২৫ থেকে ৫০ একর জায়গা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা চারটি পয়েন্ট থেকে একটি বাছাই করা হবে ডিপোর জন্য। জায়গাটি কর্পোরেশনের নাকি অন্য সংস্থার সেটাও দেখা হবে। অন্যদের হলে তাদের সাথেও আলোচনা করতে হবে। একইভাবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা রুটগুলোও অন্য সংস্থার কীনা সেটা দেখা হবে। ফিল্ড সার্ভে করতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ফিল্ড সার্ভে দ্রুত শেষ করার জন্য বলেছি। এরপরও কয়েক মাস তো লাগবে।

মনোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে জানতে জানতে চাইলে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার কত তাড়াতাড়ি স্পট বুঝিয়ে দেবে তার উপর নির্ভর করছে মনোরেল নির্মাণে কত সময় লাগবে। তিনি বলেন, মনোরেলের চারটি লাইন হবে। ৫৪ কিলোমিটার রুটে মনোরেল স্থাপনে একটি প্ল্যান করা হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় আরো বাড়ানো হবে। মনোরেলের জন্য ডিপো নির্মাণ করতে হবে। যেখানে ট্রেনগুলো রাখা হবে। ওখানে ওয়ার্কশপ এবং অফিস করা হবে। এজন্য একটি জায়গা প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশন সেটা মার্ক করে দেবে। বাকি স্টেশগুলোর জায়গা চিহ্নিত করে দিলে চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মনোরেল নির্মাণ সম্পন্ন হবে। কাজটা হয়ে গেলে নগরবাসীর জন্য একটা মানসম্মত ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা হবে।

আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুল কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে সাতআট মাসের মধ্যে ফিল্ড সার্ভের রির্পোট জমা দিতে পারব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ডিপো এরিয়ার জন্য কমপক্ষে ২০ হেক্টর বা ৫০ একর জমি দরকার। এত জমি কোথায় পাব সেটাও দেখতে হবে। এই জমি সিটি কর্পোরেশনের, নাকি ব্যক্তিগত বা অন্য কোনো সংস্থার কীনা সেটাও বিষয়। স্টার্ট পয়েন্ট অথবা ইন পয়েন্টে এই জমি হতে হবে। আশা করছি জমি পাব। এই মুহূর্তে আমাদের টার্গেট হচ্ছে ডিপো নির্বাচন করা।

মনোরেলের রুট হবে তিনটি : আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুল কনসোর্টিয়াম সূত্রে জানা গেছে, মনোরেলের সম্ভাব্য রুট তিনটি। এর মধ্যে এক নম্বর লাইনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ২৬ কিলোমিটার। এটি কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে) যাবে।

মনোরেলের দ্বিতীয় লাইনটি যাবে সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান স্কয়ার (এ কে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে) পর্যন্ত যাবে। এটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। মনোরেলের তৃতীয় লাইনটি যাবে অঙিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালী হয়ে) পর্যন্ত। এটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৪ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে ৫৪ কিলোমিটার রুটে চলবে মনোরেল।

এর আগে কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মনোরেল নির্মাণ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় হতে পারে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ঘন্টায় কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদে এবং আরামদায়কভাবে পরিবহনে সক্ষম হবে মনোরেল। মনোরেল চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে। এতে দূষণ কমবে শহরের। আবার মূল সড়ক ব্যবহার না করায় কমবে যানজট। মুরাদপুর, জিইসি, বহদ্দারহাট এবং দেওয়ানহাটের মতো ব্যস্ততম এলাকায় যানজটের চাপ কমাবে। পাশাপাশি যাত্রীদের ভ্রমণ অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনবে মনোরেল।

কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, আমরা যে রুটগুলো নির্বাচন করেছি সেগুলো এ মুহূর্তে আসলেই ফিজিবল কিনা এবং সেগুলো ডিপো এরিয়ার কাছাকাছি আছে কিনা সেটা দেখছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপণ্য রপ্তানি করেও টাকা পাচ্ছেন না অনেক গার্মেন্টস মালিক
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে ৩ অপহৃত উদ্ধার, ৩ অপহরণকারী আটক