ফিলিস্তিন : ধরিত্রীর বুকে এক দগদগে ক্ষত

ড. সালমা বিনতে শফিক | রবিবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

এক বাস্তুভিটায় একটি পরিবার বংশ পরম্পরায় বসবাস করছে। দূর গাঁয়ের এক মোড়ল এসে এক পরিপত্র জারি করেন। পরিপত্রে বাস্তুহারা একটি পরিবারকে সেই ভিটায় আবাসভূমি গড়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। একই সঙ্গে বর্তমান অধিবাসীদের কোন সমস্যা হবেনা, অধিকার ক্ষুণ্ন হবেনাতার নিশ্চয়তাও প্রদান করা হয়। সহস্রাধিক বছর আগে এই ভূখণ্ড থেকেই কোন এক পরাশক্তির আক্রমণে বাস্তুহারা হয়েছিল পরিবারটি। প্রভাবশালী মোড়লের আশ্বাস পেয়ে হাত পা বিস্তার করে বসবাস করতে শুরু করে নুতন বাসিন্দারা। ধীরে ধীরে পরিবার পরিজন, কাছে দূরের আত্মীয় স্বজনকেও নিয়ে আসে তারা। পুরনো অধিবাসীরা নতুন অভ্যাগতদের জন্য জায়গা ছাড়তে ছাড়তে কিনারে এসে পৌঁছায়। ঘর, বারান্দা ছেড়ে আঙিনায় খোলা আকাশের নিচেও আর তাদের থাকার জো নেই। এবার তাদের আঙিনা থেকে তাড়াতে চায় উড়ে এসে জুড়ে বসা পরিবারটি। কারণ বাড়িটিকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে আঙিনাটি তাদের বড় প্রয়োজন। মোড়লের একাগ্র সমর্থন পেয়ে ক্রমান্বয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে নবাগত পরিবার। পুরনো অধিবাসীদের প্রতিবেশী আর জাত ভাইয়েরাও নাম লেখায় মোড়লের দলে। এই পরিবারের নারী শিশু ছেলে বুড়ো নির্বিচারে মারা পড়ে দিনে রাতে সকাল সন্ধ্যায়কী শীত কী বসন্ত কী গ্রীস্মেকী প্রার্থনায়, কী উৎসবে। পৃথিবীর আট বিলিয়নের বেশী মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখে। এরই মাঝে কেটে যায় শতবছর। মরে মরে বেঁচে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। জন্মের অলৌকিকতায় আবারও নতুন শিশু আসে বিধ্বস্ত এই বাস্তুভিটায়।

ওপরের গল্পটি শতবর্ষ ধরে চলমান ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। মোড়লের পরিপত্রটিই ‘ব্যালফোর ঘোষণা’ (২ নভেম্বর, ১৯১৭) নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। ভুমধ্যসাগরের কোল ঘেষা এই উর্বর জনপদ পুণ্যভূমি ভুরাজনীতি, বৈশ্বিক বাণিজ্য আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিল ঘূর্ণাবর্তে পড়ে মানচিত্র থেকে আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষগুলো হার মানার নয়। বিধ্বংসী সব মারণাস্ত্র গগনভেদী আওয়াজ তুলে প্রতি মুহূর্তে উড়ে যায় ওদের ছিন্নভিন্ন বাসভূমির ওপর দিয়ে। প্রতিদিনই মারা পড়ে নারী পুরুষ বৃদ্ধ শিশু। হাতপাঅঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বীভৎস দৃশ্যের অবতারণা হয়। গৃহ নেই, খাদ্য নেই, পানীয় নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই। তবু বেঁচে থাকা মানুষগুলো উঠে দাঁড়ায়। ওদের চোখে কান্না নেই, অভিযোগ নেই, ঘৃনা নেই। আছে কেবল আকুতিমানুষের কাছে, পৃথিবীর কাছে। প্রার্থনা সর্বশক্তিমানের কাছে। পৃথিবী কি এবার শুনবে ওদের কথা? সর্বশক্তিমান, আর কত পরীক্ষা নেবেন! সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলে গৌরব করার অধিকার আমাদের আর আছে কী?

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যেদিন বিশ্বব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হলো, ঠিক সেদিনই আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে হাস্যমুখে মার্কিন রাজধানীতে অবতরণ করেন বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম সরকারপ্রধান নেতানিয়াহু। আমেরিকার শাদা বাড়িতে বসে তাঁর যাবতীয় নিষ্ঠুরতার একনিষ্ঠ সমর্থক, সহযোগী ও দোসর দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন ও আলিঙ্গন শেষে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা তথা ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁরা একমত প্রকাশ করেন যে গাজা একটি ভয়ংকর অঞ্চল, বসবাসের অযোগ্য। অতএব, এই জনপদের অধিবাসীদের তারা আশেপাশের কোন দেশে স্থানান্তরিত করে নতুন করে দৃষ্টিনন্দন একটি শহর নির্মাণ করবেন। অবলীলায় তারা বলে যান গাজার মানুষদের যেখানে খুশি যাওয়ার স্বাধীনতা আছে, অধিকার আছে। তাদের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ আবাসভূমি নিশ্চিত করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গাজাকে পুনর্গঠনে তাদের দীর্ঘমেয়াদী যৌথ পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তারা অকপটে উচ্চারণ করেন। শতবর্ষব্যাপী চলমান ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান দিয়ে দেন তারা কয়েক মিনিটেই। উত্তাল বিশ্বের সর্বত্র তাদের প্রতি ঝরে পড়ে ঘৃনা, ধিক্কার, অভিশাপ আর ফিলিস্তিনের প্রতি প্রার্থনা, মমতা ও সংহতি। ক্ষমতার মোহে উন্মাদ বিশ্বমোড়লেরা সময়ের এই বাস্তবতাটাকেই পড়তে পারছেনা।

শুধু কি নেতানিয়াহু আর ট্রাম্পই এই সংকটের জন্য দায়ী? আমেরিকার পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপ্রধানদের সকলেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েল আগ্রাসনের সমর্থক ও সহযোগী ছিলেন, এবং পরবর্তী রাষ্ট্রনায়করাও এই সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন, যদিনা অলৌকিক কিছু ঘটে না যায়। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনেই ফিলিস্তিনে হামলা চালায়অনেক মার্কিন রাষ্ট্রপতিই বিভিন্ন সময়ে এমন কথা উচ্চারণ করেছেন। তারপরও তাঁরা গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মানবাধিকারের রক্ষক, শান্তির সমর্থক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবাদী কার্যক্রমের কথাও পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। দেশে দেশে উদ্বাস্তুদের জন্য প্রাণ কাঁদে তার। মিলিয়ন বিলিয়ন টন খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপত্র ও নানাবিধ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠায় সে খোলা আকাশের নিচে তাবু গেঁড়ে দিনের পর দিন বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানবসন্তানের জন্য। ফিলিস্তিনিদের প্রতিও তার মানবিক সহায়তার হাত সর্বক্ষণ প্রসারিত। গেল অক্টোবরে জনাব জো বাইডেন সাবেক হওয়ার অল্প আগে ইসরায়েলী আক্রমণকারীদের প্রতি এক হুমকী দিয়েছিলেন এই বলে যে, গাজায় মানবেতর জীবনযাপনকারী উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য পাঠাতে বাধা দিলে ইসরায়েলের জন্য পাঠানো সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। এটাই কি এই শতাব্দীর কিংবা বলা যায় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসন নয়?

আজকাল ইউটিউব বা টিকটকে প্রতিনিয়তই দেখা যায়, মার্কিন উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তা কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন, যেখানে দু’একজন মানবাধিকার কর্মী ফিলিস্তিনের পতাকা কিংবা কেফিয়া গলায় ঝুলিয়ে, কেউবা মাথায় বেঁধে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কেউ বলছে আপনি যুদ্ধাপরাধী। কেউ বলছে ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্ত আপনার হাতে। বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তিটি নারী পুরুষ যেই হোন না কেন, একটা তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ধরে রেখে চিৎকার শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর অনুগত আইনের পোশাক পরিহিত কয়েকজন কর্মী এসে টেনে হিঁচড়ে প্রতিবাদী কণ্ঠের পুরুষ বা নারীটি কে বের করে দিয়ে সভাস্থলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। বক্তৃতায় বাধাপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তি তখন বেশ গর্বের সঙ্গে বলে ওঠেনThis is the beauty of American democracy.

আমেরিকান গণতন্ত্রের এই সৌন্দর্যের কথা সর্বজন স্বীকৃত। আজও বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্রের সংজ্ঞার হাতেখড়ি নেয় আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবার্গ ভাষণ (৯ নভেম্বর, ১৮৬৩) হতে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিলেনগণতন্ত্র জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ও পরিচালিত। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি লিঙ্কন গৃহযুদ্ধে নিহতদের স্মরণে গেটিসবার্গ গোরস্থানে দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি আমেরিকার অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শান্তির কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর আদিপতাদের স্মরণ করেছেন, যারা তাঁর ভাষায়, ‘স্বাধীনতা ও সাম্যের মহান মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ’ ছিল! ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেনএই জাতির স্বাধীনতা সুরক্ষিত হবে এবং ুজনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত এই সরকার পৃথিবী থেকে বিলীন হবে না।” আব্রাহাম লিঙ্কন আমেরিকার সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অধিকার ও ক্ষমতার গুরুত্ব বোঝাতে, বিশেষত সম্ভাব্য ভাঙনের হাত থেকে মার্কিন জাতিকে রক্ষা করার প্রয়োজনেই এই ঐতিহাসিক, কালজয়ী ভাষণ দিয়েছিলেন। আমরা প্রাচ্যবাসীরা শেষের বাক্যটিকে খণ্ডিত আকারে পাঠ্যপুস্তকে প্রকাশ করে গণতন্ত্রের সবক নিয়েছি মার্কিনীদের কাছ থেকে। মার্কিন জাতিসত্তার উৎপত্তি যে ইতিহাসের একটি গৌরবময় নয়, বরং ক্লেদাক্ত অধ্যায়, এটা সমগ্র পৃথিবী যেমন জানে, তেমনি জানে মার্কিনীরাও। কিন্তু ঐ যেবিত্ত, বৈভব, ক্ষমতাঅস্ত্রভাণ্ডার সব তাদের করায়ত্ত; সাধ্য কার কেউ তাদের টলায় ! রাজপথের ওসব মামুলি প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ মিছিল তাই তাদের লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনা।

বিশেষ করে ফিলিস্তিন, যেখানে ট্রাম্প নিযুক্ত মার্টিন ওলাইনার নামে ‘হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কাউন্সিল’ এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভাষায় ‘ঊনমানুষ কিংবা মন্দ মানুষদের বসবাস’ সেখানেতো নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যেতেই পারে! “Palestinians are fundamentally evil and are not worthy of any mercy. They must pay a price for their actions.”- কোন সে অপরাধে অপরাধী ফিলিস্তিনিরা! কী পাপ করেছিল ১৭ হাজারের বেশী শিশু? পাপপুণ্য, ন্যায়অন্যায়ের বিচার করার আপনিইবা (মার্টিন ওলাইনার) কে?- তথাপিও এমন ঘোরতর মানবতাবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি গণতন্ত্র, সাম্য, স্বাধীনতার দেশে উচ্চপদে বহাল আছেন, নিরাপদে আছেন, সসম্মানে আছেন। আন্তর্জাতিক আইন, বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা, সর্বোপরি জাতিসংঘ তাঁকে স্পর্শও করতে পারেনা। তাঁর স্ত্রী পরিজন তাঁকে কি চোখে দেখেন, এই কথাটি ভাবনায় আসতেই মনে হলো ট্রাম্প, নেতানিয়াহুসহ বিশ্বনেতাদের সকলেরইতো দারা পুত্র পরিবার রয়েছে। কেউ কি তাদের বলছে এবার থামো? শুধু কি পরিবার, তাদের আছে শতসহস্র অনুরাগী। তাদের দানবীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রাণ দিতে প্রস্তুত সেইসমস্ত অনুরাগীরা।

ফিলিস্তিনিদের রক্তাক্ত এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে দীর্ঘায়িত করায় আর কারও কি দায় নেই? আমরা, যারা নিজেদেরকে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিবাদী মানুষ বলে চিরকাল মাথা নত করে, গা বাঁচিয়ে, পাশ কাটিয়ে চলে যাই, তাদের কি কোন দায় নেই? ‘সত্যভাষীরা যখন অন্যায় ও মিথ্যার সামনে নীরব থাকে, তখন মিথ্যাবাদীরা নিজেদের বিশ্বাসটাকেই সত্য বলে জানে’ হযরত আলী (রাঃ)’র এই একটি উক্তিই সমাজের তথা পৃথিবীর ঘুম ভাঙাতে পারে। আশার কথা, বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ এই প্রথম ফিলিস্তিনিদের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ও ভালোবাসা নিয়ে রাজপথে নেমেছে। শহর, নগর এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিলে নেমেছে সর্বস্তরের নারীপুরুষ। অবরূদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়া জনতা কখনও অপর জনগোষ্ঠীর দুর্দশা দেখে বিচলিত হয়না, অন্যের মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলতে পারেনা। দেড় দশকের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত অভুত্থানের মাধ্যমে মুক্ত বাংলাদেশের মাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংঘটিত অন্যায়, অবিচার ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে ৭ এপ্রিলের সার্বজনীন প্রতিবাদ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে মুক্ত বাতাসের শক্তি। ইউরোপ আমেরিকার নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই সরব, যদিও তাতে কারও গদিই টলেনি। এক মার্কিন নৌ সেনা তার সরকারের অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মাহুতি দিয়ে। ‘ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবে’জলন্ত আগুনে পুড়তে পুড়তে এই ছিল তার শেষ কথা।

কিন্তু আরববিশ্ব নিশ্চুপ। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নেই কোন প্রতিবাদ সভা। কারণ আরবের অধিকাংশ দেশেই একনায়কতন্ত্র তথা পরিবারতন্ত্র বর্তমান। জনতার প্রতিবাদ বিক্ষোভ তাদের সাজানো স্বৈরতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে সেই আতঙ্কে তারা দেশের শিক্ষিত প্রজন্মকে অবাধ বিলাস ব্যসনে ডুবিয়ে রাখে, যাতে করে অধিকারের প্রশ্ন কোনদিন উচ্চারিত না হয়, এবং রাজকার্যের অংশীদার হওয়ার স্বপ্নও কেউ না দেখে। উপরন্তু আছে ইসরায়েল ও আমেরিকার সাথে সখ্যতা। এই সখ্যতায় বন্ধুতা নেই, আছে আরববিশ্বের মাটির নিচে লুকায়িত তরল সোনার অবাধ কেনা বেচার হিসেব নিকেশ। ফিলিস্তিনিদের এই মরণপণ সংগ্রামে আরবদের তাই কোন সমর্থন নেই। আর সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় বাধাটা এখানেই।

২০২৪ এর ২৫ জুলাই। রক্তে ভেজা শ্রাব বয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। নিজ দেশে প্রতিদিন তরুণ যুবার লাশ গুনতে গুনতে শতবছরের অধিকাল ধরে স্বাধীনতা সংগ্রাম করে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা মনের আড়ালে চলে যায়। কেমন করে যেন ছোট্ট একটি খবরে চোখ আঁটকে যায়। না, গাজায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছে, সেই খবরে নয়; ‘মৃত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিল জীবিত শিশু’এমন সংবাদ আলোড়ন তোলে বুকের ভেতর। হত্যাকারীরা আজও মনে করে তারাই সর্বশক্তিমান!

লেখক : অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধসমকালের দর্পণ