ফিরে পাওয়া কিশোরবেলা

মুজিব রাহমান | রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ২:৩৮ অপরাহ্ণ

৬৬ বছরে পদার্পণ করেছে চট্টগ্রামের গণমানুষের পত্রিকা দৈনিক আজাদী। এউপলক্ষ্যে নানান আয়োজন পরম্পরায় ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আজাদী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো পত্রিকাটির অনন্য আকর্ষণ ছোটোদের সাহিত্য পাতা ‘আগামীদের আসর’এর প্রীতিময় মিলনমেলা। ‘আগামীদের আসর’কে কেন্দ্র করে আয়োজিত এ মিলনমেলায় আমন্ত্রিত লেখকদের একজন হিসেবে উপস্থিত থাকতে পেরে আজাদী পত্রিকার ‘আগামীদের আসর’এ প্রথম লেখা ছাপানোর আনন্দের পুনর্জাগরণ অনুভব করেছি নিজের ভেতরে। এ সুনন্দ আয়োজনের জন্যে আজাদী কর্তৃপক্ষকে বেশুমার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে আগামীদের আসর এ লিখেছি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছড়া প্রকাশিত হয়েছিল ‘আগামীদের আসর’এ। গদ্য প্রকাশিত হয়েছিল সমসাময়িক বিষয় নিয়ে, জিজ্ঞাসামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে লিখেছি শনিবার প্রকাশিত ‘আগামীদের আসর’ নামের আজাদী পত্রিকার এ পাতাটিতে। আগামীদের আসরে আগামীর অনন্ত সম্ভাবনাময় শিশুকিশোরদের জন্যে আগামীর প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখকবৃন্দ তখন প্রাণের তাগিদে লিখতেন। তাদের লেখা ছাপা হতো। উদ্দিষ্ট পাঠকেরা সেসকল লেখা পড়তেন। লেখকবৃন্দ যেমন অনুপ্রাণিত হতেন, তেমনি প্রকাশিত হবার সুবাদে একটা লেখক স্বীকৃতি পেতেন। এবং উত্তরোত্তর নিজেদের লেখার সাহিত্যরস ও গুণমান উন্নীত করার একটা অলক্ষ্য সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন।

আগামীদের আসর যে বীজতলা তৈরি করে দিয়েছিল তারই সমপ্রসারণ আজকের এ মিলনমেলা। ৬৬ বছরে কতো কতো লেখক এপাতায় লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কাঁচা বয়সে অল্প সম্বলে অদ্ভুত কীর্তি করিতে না পারিলে মন স্থির হয় না’ কাজেই এঅস্থিরতা নিয়ে যে তরুণ লেখকেরা সাহিত্যের পথে একাগ্র সাধনায় অগ্রসর হয়েছেন তাদের অনেকের জন্যেই সলতে পাকানোর পরিসরটি তৈরি করে দিয়েছে ‘আগামীদের আসর’এ সাহিত্য পাতাটি। এবং সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম মৃতবৎসা জগতে এপাতায় লেখালেখি করেছেন এমন অনেকেই পরবর্তীতে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন, পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, লেখালেখির নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরেছেন। এআসরের কাছে এবং আসরের পরিচালক ভাইয়াদের কাছে সংশ্লিষ্ট লেখকদের ঋণ তাই উল্লেখযোগ্য। দ্রষ্টব্য। আজাদী পত্রিকা পরিবারের বিশিষ্টজন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক রাশেদ রউফ তাঁর স্বভাব স্বতন্ত্র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত শতাধিক লেখকের স্মৃতিচারণমূলক স্বল্পকথায় আজাদীতে তাঁদের প্রথম লেখা প্রকাশিত হবার আনন্দ ও বিস্ময় নিয়ে যে আবেগঘন বর্ণনা লতিয়ে উঠেছিল তা ছিল অভূতপূর্ব। এমিলনমেলায় এসে রবীন্দ্রনাথের সেই কথা আবারও মনে পড়লো যেখানে তিনি বলেছেন:

মানুষের সহিত মানুষের, অতীতের সহিত বর্তমানের, দূরের সহিত নিকটের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ যোগসাধন সাহিত্য ব্যতীত আরকিছুর দ্বারাই সম্ভবপর নহে।’

কাজেই, মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্য এসাহিত্যকে, সুন্দরকে দয়া ও দায়ের সমাজেসংসারে পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ও বিস্তৃত করা আজ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্মানীয় মালিকসম্পাদক অক্লিষ্টকর্মা বিশিষ্টজন এম এ মালেক মহোদয়ের কণ্ঠেও একই সুর ধ্বনিত হয়েছে। তিনি তাঁর উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তৃতায় আজাদীকে বাঁচিয়ে রাখার অনবদ্য ইতিবৃত্ত বর্ণনা করেছেন। উত্থানপতন আকীর্ণ জীবনে ইতিবাচকতার, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করেছেন। এতে গণমানুষের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর গভীর ও দৃঢ় দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁকে অভিবাদন ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আগামীদের আসর’এর আহ্বানে একদা যেসকল তরুণ প্রাণ ছড়াশিল্পী, কবি, গল্পকার ও লেখকেরা এ পাতায় লেখালেখি করেছেন আজ তাঁরা বৃহতের দলে, আজ তাঁরা সংবর্ধিত। এ প্রসঙ্গে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মর্তব্য:

অঙ্কুরিত বন্ধু যতো মাথা তুলে আমারই আহ্বানে

জানি তারা মুখরিত হবে নব অরণ্যের গানে।

আগামী বসন্তে জেনো মিশে যাবো বৃহতের দলে

জয়ধ্বনি কিশলয়ে, সংবর্ধনা জানাবে সকলে।’

আগামীদের আসর’এর দীর্ঘ সময়ের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় বিভাগীয় সম্পাদক প্রদীপ দেওয়ানজী। তাঁর গতিময় হাত ধরে ‘আগামীদের আসর’ পুনশ্চ পূর্ণ কলেবরে প্রকাশিত হোক দৈনিক আজাদী কর্তৃপক্ষের কাছে অমিত সম্ভাবনায় বসবাসকারী সকল প্রবীণ ও নবীন লেখকের এঐকান্তিক প্রত্যাশা।

লেখক : কবি; অনুবাদক; সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিশোরবেলার প্রথম প্রেম
পরবর্তী নিবন্ধঅসংখ্য লেখক সৃষ্টির আঁতুড়ঘর ‘আগামীদের আসর’-জিও জনম জনম