ফিদেল কাস্ত্রো নারীবাদী হিসেবেও এক অনন্য নাম

অনুবাদ: নিগার সুলতানা

| শনিবার , ২৯ জুন, ২০২৪ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

যদিও ফিদেল কাস্ত্রো আর নেই, কিন্তু নারীবাদে তিনি রেখে গেছেন এক শক্তিশালী পূর্ববর্তী সম্পৃক্ততা। আমরা হয়তো অনেকে তা জানি না। আমরা নিখুঁত কিছু তথ্যে তার সন্ধান করতে পারি।

২০০৮ সালে কাস্ত্রোর ভাই শাসনভার নেওয়ার আগে, কাস্ত্রো প্রায় ৫০ বছরের মত কিউবা শাসন করেছেন। কিংবদন্তিরা একমত এ বিষয়ে, ফিদেল কাস্ত্রো অগণিত আমেরিকান হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা কাস্ত্রোর নারীদের পাশে অবস্থান এবং দ্বীপের নারীদের অধিকার সুনিশ্চিতে বেশি নজর দিচ্ছি।

তার রাজত্বের সময়কালে, বহু নারী অধিকার সংস্থা গঠন হয়েছিল যা নানাবিধ প্রচারণা চালিয়েছে এবং এখনো শক্তিশালী অবস্থানে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

. ফিদেল কাস্ত্রো কিউবান এবং দেশের নারীবাদীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আনার এক দেশাত্ববোধের প্রতীক ছিলেন।

. ফিদেল কাস্ত্রো ও রাউল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে, নারীর কাজ, কিউবায় লিঙ্গের সাম্যতা এবং ভবিষ্যতে কিউবাতে নারীর শাসন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ আইন তৈরি এবং আইনের প্রয়োগ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

. লিঙ্গের সমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, নারীর অগ্রগতির জন্যে কিউবা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। যা এই বিশ্বের জানা উচিত।

. ১৯৫৮ সালে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাতিস্তা সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিপ্লব যুদ্ধের সময়ে “দ্য মারিয়ানা গ্রেজলেস উইমেন প্লাটুন” ফ্রিদেলের দ্বারা গঠিত হয়। জরিপ মোতাবেক, ১৩ জন নারীকে সঙ্ঘবদ্ধ করা হয়েছিল যুদ্ধের জন্যে। প্লাটুনটির গঠনে সকলের চোখ আকাশে উঠলেও, এই বিশ্ব মনে রাখবে এটিই প্রথম শীর্ষস্থানীয় নারী যোদ্ধাদের মিশ্রণ যা বিপ্লব যুদ্ধের শেষঅবধি ছিল এবং যা কিনা পরবর্তী সময়ে কিউবা নারীদের বিপ্লবী যোদ্ধা হিসেবে দুয়ার খুলে দেয়।

. যুদ্ধের শীর্ষস্থানীয় এক নারীযোদ্ধা বলেন, টেট পুয়েব্লার (যিনি প্লাটুনের সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে কাজ করছিলেন) বই মারিয়ানার লড়াই আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং গুরুত্বের সাথে ফিদেলের সময়ে যৌনতা, বৈষম্য কাটিয়ে উঠতে কিউবার নারীদের সংগ্রামের অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছিল।

. ১৯৫৯ সালে, কিউবা থেকে বাতিস্তা ফ্লাইটের ধর্মঘটের পরের দিন, ফিদেল কাস্ত্রো একটি বক্তৃতায় কিউবায় নারীদের প্রতি হওয়া অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের ওপর নজরপাত করেন। তিনি নারীদের অবশ্যই বিপ্লব যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে তার চিন্তার কথা বলেন। তিনি কিউবানদের বললেন, “এমন এক জাতি যেখানে নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি লড়াই করেমানুষ অদম্য”

. ফিদেল বিভিন্ন নারীগোষ্ঠীদের স্থাপন করতে সাহায্য করেছেন যার মধ্যে ১৯৬০ সালে ফেডারেশন অব কিউবান উইমেন (এফএমসি) অনিবার্য। কিউবান নারীদের বিশেষ চাহিদা ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের লক্ষ্যে এফএমসি ফোরাম গঠিত হয়েছিল।১৬ বছর বয়সের কিউবার ৮৫%-৯০% নারীরা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং অবশ্যই আজকে কিউবায় এটি অন্যতম জনসঙ্ঘ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

. সেসময়ে, শতাধিক নারী মিলিশিয়া এবং সিডিআরইতে যোগদান করেছিল যেখানে তাদের বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে সাহায্য

করা হয়েছিল। সব দিক থেকে, সে মহিলারাই তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে এবং পুরানো গতানুগতিক ভাবনা থেকে বের হয়ে নিজেদের ভেঙ্গে সম্ভাবনাময়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।

ফিদেল কাস্ত্রো যার সেসময়ে বহু নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল, তবে তার বিরল বক্তৃতা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি কিউবার নারীদের বিরুদ্ধে কুসংস্কার ভেঙ্গে দিয়েছিল। কিছু গতানুগতিক ভাবনা এখনো ছিন্নভিন্ন হওয়া দরকার তবে ফিদেলের সাথে কিউবার নারীদের চলাচল কিউবার সমাজে বিপ্লবী রূপান্তর আনতে সাহায্য করেছিল।

আজকের এই বিশ্বে কিউবার নারীরা রয়েছেন কিউবার সামরিক বাহিনীর প্রথম সারিতে। কিউবার নারীকর্মী নিয়ে ৪৩.% (১৯৫৩ সালে ১৯.% তুলনায়) কারিগরি ও পেশাদার ভূমিকায় বেশি কর্মসংস্থান গঠন করা হয়েছে। শুনতে বেশ ভালো লাগবে, কিউবার ২৫% নারী কংগ্রেসে এবং ৫০% নারী চিকিৎসা খাতে আছেন। বলা আবশ্যক, এফএমসি প্রায় পতিতাবৃতি অপসারণ করতে পেরেছে।

রাউল কাস্ত্রোর মত, যিনি বিপ্লবী স্লোগান দিয়ে তার ভাই ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুর শোকসংবাদটি ঘোষণা করেছিলেন, একই শব্দের সাথে আমরা ফিদেল কাস্ত্রো এবং তার নিঁখুত বুদ্ধিগুলোর পক্ষে চিৎকার করেছিলাম যা কিউবার নারীদের অগ্রগামী এবং উজ্জ্বল করতে সহায়তা করেছিল্ল সর্বদা বিজয়ের দিকে!

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই মাস পর চালু হলো দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল
পরবর্তী নিবন্ধগায়ে হলুদের আগে তরুণীর আত্মহত্যা, থানায় মামলা