নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে ফিক্সড প্রাইস বা এক দামে পোশাক বিক্রির নামে চলছে প্রতারণা। পোশাকের গায়ে প্রাইস ট্যাগের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘সাংকেতিক কোড’। এক দাম লিখে একই পোশাক একেক মার্কেটে একেক দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। অভিযোগ রয়েছে–বিদেশি পোশাকে ক্রয়মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ–তিনগুণ দাম নেয়া হচ্ছে। আবার অনেক পোশাকের আমদানির বৈধ কাগজপত্রও নেই। অনেক ব্যবসায়ী ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার জন্য পোশাকের গায়ে প্রাইস ট্যাগ সংযুক্ত করেন না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানে এক দাম লিখা থাকলেও ক্রেতাদের দর–দাম করার সুযোগ দেয়া হয়। তবে ক্রেতাদের দাবি, হয়তো ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো ক্রেতা ২০–৫০ টাকা কম দিতে পারেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দর–দামের সুযোগ থাকে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ বাজারে ক্রেতাদের গলাকাটার জন্য মনে হয় ব্যবসায়ীরা বসে থাকেন। দেখা যায় পোশাকের ক্রয়মূল্য ৫ হাজার টাকা, কিন্তু সেই পোশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। অথচ এসব পোশাকের কোনোটাতেই প্রাইস ট্যাগ লাগানো থাকে না। এসব বিষয় নিয়ে দোকানের মালিকের সাথে কথাও বলা যায় না। ভারতীয় শাড়ি এক দুই হাজার টাকায় কিনে ঈদের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। এছাড়া থ্রি–পিস, শিশুদের ফ্রক, পাঞ্জাবি এবং জুতার দাম নিচ্ছেন যার যার খেয়াল খুশিমতো। বালি আর্কেডে আসা ক্রেতা আফরোজা আকতার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদের বাজারে ক্রেতারা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েন। অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সাথে এসময় ভালোভাবে কথাও বলা যায় না। একটি থ্রি–পিস দেখেছিলাম সানম্যার ওস্যান সিটিতে। সেই থ্রি–পিসের দাম দোকানি আড়াই হাজার টাকা বলে। আবার ঠিক একই ধরনের ত্রি–পিসের দাম এখানকার বিক্রেতারা বলছেন সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে দর–দামেরও কোনো সুযোগ নেই।
উম্মে কুলসুম নামে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা এক গৃহিণী বলেন, এক দামে পোশাক বিক্রির মধ্যে আসলে এক ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। বেশিরভাগ পোশাকের গায়ে দাম লিখা থাকে না। আবার বলছে– এক দাম। এখন বিক্রেতারা মুখে যেটি বলছে সেটিই একদাম হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিটি পোশাকে প্রাইস ট্যাগ লাগানো উচিত। তাহলে স্বচ্ছতা থাকবে।
জানতে চাইলে টেরিবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পোশাক দেখতে ঠিক একই ধরনের হলেও পোশাকের গুণগত মান যে একই হবে তা ঠিক নয়। অনেক সময় ক্রেতারা সেটি বুঝতে চান না। একই ধরনের শাড়ি রিয়াজউদ্দিন বাজারেও পাওয়া যায়, আবার টেরি বাজারেও পাওয়া যায়। গুণগত মানের পার্থক্যের কারণে আসলে দাম কম–বেশি হয়। অন্যদিকে দাম বেশি নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ফিনলে স্কয়ারের ব্যবসায়ী মুজিবুল আলম বলেন, আমরা কোনো পোশাকেই অতিরিক্ত লাভ করি না। কেনার দামের অল্প লাভে বিক্রি করি। কারণ এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজার। বেশি লাভ করার সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সহ–সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, এক দামে পণ্য বিক্রির সময় আমরা ব্যবসায়ীদের বলি–এমন একটা কোড ব্যবহার করার জন্য যেটিতে ক্রেতারা বিভ্রান্ত না হয়। তবে এক্ষেত্রে অনেক ব্যবসায়ী নিজস্ব গোপনীয়তার জন্য কোড ব্যবহার করে থাকে।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ–পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এক দামে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে পোশাকের গায়ে প্রাইস ট্যাগ থাকে না, এটি সত্য। এটি করার সুযোগ নাই।