ফাহমিদা আমিন (১৯৩৬–১৯১৭)। রম্য সাহিত্যিক, সমাজসেবী ও সংগঠক। নারী সমাজের অগ্রগতির এক অনন্য সারথী। তিনি চট্টগ্রামের রোকেয়া নামেও খ্যাত। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারি খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বামী প্রয়াত বিজ্ঞানী ড.এম আর আমিন। এই দম্পতির ছয় ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনশাদ ইবনে আমিন পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হন। সব ক্ষেত্রেই তিনি সার্থক ও সফল। অষ্টম শ্রেণি পড়াকালীন বিয়ে, ছ’টি সন্তানের জননী। সংসারধর্ম পালন করে, সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। নিজেও অর্জন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন রত্নগর্ভা, অন্যদিকে ছিলেন সৃষ্টিশীল এক মানুষ। তাঁর লেখা আমাদের সাহিত্যের সম্পদ হয়ে থাকবে। পুরুষশাসিত সমাজে কীভাবে একজন নারী মাথা তুলে দাঁড়াবে তা ফাহমিদা আমিন শিখিয়ে গেছেন নারীদের। তিনি যখন মাইকের সামনে দাঁড়াতেন, দর্শক শ্রোতারা নড়েচড়ে বসতেন তাঁর কথা শোনার জন্য। সেই অসাধারণ বক্তব্য, চমৎকার রসালো যুক্তিভরা উপস্থাপনা। তিনি তাঁর রম্যসাহিত্যে তির্যক ভাষায় সমাজকে তুলে ধরেছেন পাশাপাশি সমাধানের দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাঁর অসাধারণ সব রম্যরচনার শুধু দেশেই নয় বিদেশেও অগণিত পাঠকপ্রিয়তা ছিলো। এর বাইরে তিনি গল্প, গান, কবিতা, শিশুতোষ, সাহিত্য, ছড়া, স্মৃতিকথাসহ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে ‘নিমমধু’, ‘অনিবার্যকারণবশত’, ‘মনের আঙ্গিনায়’, ‘মৌ ঝুর ঝুর’, ‘বার্মিংহাম থেকে লিখছি’, ‘করাচি প্রবাসে’, ‘রঙে রঙে বোনা’, ‘প্রজাপতি রং ছড়ায়’, ‘ঝালে ঝোলে অম্বলে’ ইত্যাদি। তিনি তাঁর লেখার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননা। স্বর্ণপদকে সম্মানিত হয়েছেন, বহু সংগঠন থেকে। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।