ফানুসের আলোয় ঝলমলে আকাশ

বান্দরবানে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসব

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৩ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

ফানুসের আলোয় ঝলমলে বান্দরবানে রাতের আকাশ। মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ উৎসবে যেন রং লেগেছে পাহাড়ে। পাহাড়ি পল্লীগুলো সেজেছে নতুন সাজে। উৎসবের আনন্দে মেতেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা, তঞ্চঙ্গা, ত্রিপুরা, চাকমা, খুমি, খেয়াং, ম্রো, বম পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা। রোববার রাতে স্থানীয় রাজারমাঠে গৌতম বুদ্ধের স্মরণে ফানুস বাতি উড়ানোর আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বাহাদুর উশৈসিং এমপি। করোনা পরিস্থতির কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সংক্ষিপ্ত করা আয়োজনে উড়ানো হয় শতাধিক রং বেরঙের ছোট বড় ফানুস বাতি। এসময় আতসবাজির শব্দ-আলোয় মুখরিত উঠে আশপাশ। ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়ে রাতের আকাশ। পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান এ সামাজিক উৎসব দেখতে রাজারমাঠ এলাকায় ভিড় জমিয়েছিলো বান্দরবান বেড়াতে আসা অসংখ্য পর্যটকও। একই সময়ে ফানুস বাতি উড়ানো হয় রাজগুরু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, উজানীপাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ পাহাড়ি পল্লীগুলো থেকেও। এদিকে রাতের বেলায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের মূল আকর্ষণ মঙ্গল রথযাত্রা বের করা হয়। বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা ময়ুর রথের উপরে একটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে মঙ্গল রথটি কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার থেকে রশি দিয়ে টেনে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকাগুলো ঘোরানো হয়। এ সময় বৌদ্ধ ধর্মের নর-নারীরা মোমবাতি জালিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বুদ্ধ মূর্তিকে। শহর ঘুরিয়ে মঙ্গল রথটি মধ্যমপাড়াস্থ সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়। রথ যাত্রায় অংশ নেয় পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।
উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য মংচিং নু মারমা জানান, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর ধর্মীয় প্রার্থনা, ছোয়াইং দান, ফানুস বাতি উড়ানো এবং মঙ্গল রথটি শহর ঘুরিয়ে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জনের মাধ্যমে দুদিন ব্যাপী মূল অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়েছে। তবে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে ফানুস বাতি উড়ানো সহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই উৎসব চলবে আরও ক’দিন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানায়, তিন মাস বর্ষাবাস (উপুস) থাকার পর মারমা সমপ্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। প্রচলিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিল। তাই আশ্বিনী পূর্নিমার এই তিথিতে আকাশে উড়ানো হয় ফানুস বাতি। পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়েরা নিজস্ব সামর্থ অনুযায়ী ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে মারমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর অনুষ্ঠানমালা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। পাহাড়ে উৎসব মানে, পাহাড়ি-বাঙালি মিলে মিশে একাকার। কিন্তু এবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে যতটুকু করা সম্ভব, সেটিই উদযাপন করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজস্থলীতে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতারণা করে ঋণের জামিনদার বান্দরবানে নারীর মামলা