ফাটল নেই, চলতে পারবে যান

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ।। র‌্যাম্পের পিলার পরিদর্শন শেষে নকশা প্রণয়নকারী বিশেষজ্ঞ দলের মতামত

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে কোনো ফাটল নেই। হালকা যান চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার এখনই খুলে দেয়া যেতে পারে। যেটিকে ফাটল হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে সেটি আসলে কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। গতকাল র‌্যাম্পটি পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ টিম উক্ত মতামত প্রদান করেছে। র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্টস লিমিটেডের বিশেষজ্ঞ দল তাঁদের মতামত লিখিতভাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা র‌্যাম্পটি হালকা যানবাহন চলাচলের ডিজাইন করা উল্লেখ করে এটির প্রবেশমুখে একটি ব্যারিয়ার স্থাপনেরও পরামর্শ দিয়েছেন। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে র‌্যাম্পের নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিপিএম কনসালটেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সোবহান , পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান আলম, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সামী মো. রেজা, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মনির হোসেন, সিডিএ উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোরশেদুল হক গতকাল সকালে র‌্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ দল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বরাবর একটি প্রতিবেদন প্রদান করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, আমরা ম্যান-লিফট ক্রেন দিয়ে কলামের যেখানে ক্র্যাক হয়েছে বলা হচ্ছে সেই স্থানটি দেখেছি। সেখানে স্ক্র্যাপার ও স্টিল ব্রাশ দিয়ে ঘষে দেখতে পেলাম এটি কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। পিয়ার, কলাম ও সুপার স্ট্রাকচার বক্স গার্ডারের মিলনস্থলে এটির অবস্থান।
প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হয়- এটি কোন ক্র্যাক নয়, কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। তবে এটি খুব পরিপাটিভাবে করা নয়। এতে মর্টার ঠেকাবার জন্য ফোম ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই ফোম এ পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়নি। উপরন্তু চারপাশে কিছু জায়গায় জয়েন্টে আনুষঙ্গিক ১০ মি.মি. পর্যন্ত অতিরিক্ত কংক্রিট বের হয়ে রয়েছে। দূর থেকে দেখলে এটাকে ক্র্যাক বলে মনে হয়। বাস্তবে এটি ক্র্যাক বা ফাটল নয়।
এতে আরো বলা হয়, লুপটি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সাথে সংযোগের জন্যে ২ টি ব্রাঞ্চ লুপের কক্সবাজার অংশে বেশ বড় কার্ভ বা বাঁক আছে। এটির কেন্টিলিভার স্প্যান ১৪.৩৪৬ মিটার। এতো বড় কার্ভ কেন্টিলিভার হিসেবে ডিজাইন করা কঠিন ছিল। জায়গার অভাবে নীচে আরেকটি কলাম করার উপায়ও ছিল না। এখানে বিশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করারও সুযোগ ছিল না। বাস্তব সম্মত সমাধান হিসেবে একটি বক্স গার্ডার সেকশন ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কেন্টিলিভারের মাথায় ১০০ মি.মি. দেবে গেছে। কেন্টিলিভারের গোড়ায়, এম্ফাল্টিক কংক্রিটের গোড়ায় কিছু হেয়ার ক্র্যাক (চুলফাটা) দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে খুঁড়ে দেখা যায়, ডেক স্ল্যাবের উপরে কোন ফাটল নেই।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, র‌্যাম্পের এই লুপটি লাইট ভেহিক্যালের (হালকা যানবাহন) জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এ জন্য র‌্যাম্পটি চালু করার সময় ওখানে একটি ‘বার’ লাগিয়ে তাতে ‘এখানে ভারী যানবাহন চলা নিষেধ’ লিখে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। উচ্চতারোধক এ ধরনের কোন বার র‌্যাম্পের গোড়ায় পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু ব্রিজে ক্র্যাক বা দেবে যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে তাই অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেয়া যায়। এখানে ক্র্যাকের মতো এমন কিছু বিষয় দেখা যাচ্ছে যা স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিকর নয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বরাবর উক্ত প্রতিবেদন প্রদান করার কথা স্বীকার করে বিশেষজ্ঞ টিম গতকাল বহদ্দারহাটে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছে।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্লাইওভারে ফাটলের মতো যেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তা মূলত কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। আর সাটারিংয়ের জন্য দেয়া ফোম বের হয়ে গেছে। অধিকতর নিশ্চিত হতে কারিগরি পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে ক্র্যাক হওয়া স্থানটি কেটে পিলারের ভেতরে কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা তাও দেখা হবে।
তাঁরা বলেন, ফ্লাইওভারে কোনো ফাটল নেই। হালকা যান চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার এখনই খুলে দেয়া যেতে পারে। তবে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কিছু কারিগরি পরীক্ষা করা হবে।
ডিপিএম কনসালটেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এমএ সোবহান বলেন, যেহেতু একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাই আরো গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপর পর্যবেক্ষণসহ প্রতিবেদন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে- এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতেই র‌্যাম্পটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২য় ডোজ পাবেন চট্টগ্রামের সাড়ে তিন লাখ মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬