ট্র্যাজিক হিরো বুঝি তাকেই বলে। একার কাঁধে দলকে টানলেন তিনি। আর্জেন্টিনার তালুবন্দী থাকা ম্যাচকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। গত বার বিশ্বকাপের ফাইনালে করছিলেন একটি গোল। দেশ জিতেছিল বিশ্বকাপ। এবারের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের পরে দ্বিতীয় বার কোনও ফুটবলার ফাইনালে এই কীর্তি করলেন। সেবার ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। সেবার ইংল্যান্ড হারেনি। একবারই বিশ্বকাপ জিতেছিলো তারা। হার্স্টের হ্যাটট্রিকে সেবার পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিলো ইংল্যান্ড।
দীর্ঘ ৫৬ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক হলো। এবার হ্যাটট্রিক করলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। প্রথম দিকে গুটিয়ে থাকা এমবাপে দ্বিতীয়ার্ধে দূরন্ত ফুটবল খেললেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হলো এমবাপেকে। খেলার জন্য নায়কের মর্যাদা পেলেও দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জেতা হল না। এবারের বিশ্বকাপে ৮ গোল করে সোনার বুট এমবাপের দখলে। কিন্তু তার পরেও চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন তিনি। তবে যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিলেন, আগামী দিনে বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে একাই দাপিয়ে বেড়াবেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধে এমবাপেকে আটকে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। তার প্রধান অস্ত্র প্রান্ত ধরে দৌঁড়।
সেই দৌঁড় বন্ধ করার জন্য মলিনা ও ম্যাক অ্যালিস্টারকে রেখেছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। ফলে বার বার আটকে যাচ্ছিলেন তিনি। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম অলিভিয়ের জিরুদকে তুলে নেওয়ায় প্রধান স্ট্রাইকারের ভূমিকায় চলে যান এমবাপে। ফলে আরও বেশি নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রথমার্ধে মাত্র একবার আর্জেন্টিনার বঙে ঢুকতে পেরেছিলেন এমবাপে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলা যত গড়াল তত ম্যাচে দাপট দেখাতে শুরু করলেন এমবাপে। বয়সের ছাপ কোথায় হয়তো দেখা গেল মেসির খেলায়। বল ধরছিলেন। কিন্তু সে ভাবে আক্রমণ তৈরি করতে পারছিলেন না।
অন্য দিকে এমবাপে নিজের পছন্দের জায়গায় খেলা শুরু করতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। বঙের মধ্যে ওটামেন্ডি ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। জোরালো শটে গোল করেন এমবাপে। দু’মিনিট পরেই বঙের মধ্যে থেকে ডান পায়ের দূরন্ত শটে ফ্রান্সের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন এমবাপে। চলন্ত বলে তিনি যে শট মারলেন তা এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোল। নির্ধারিত সময়ের শেষ ১০ মিনিটে এগিয়েও যেতে পারত ফ্রান্স। এমবাপের জোরালো শট একটুর জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়।
অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলে আর্জেন্টিনা আবার এগিয়ে গেলে মনে হচ্ছিল ফ্রান্সের হার নিশ্চিত। কিন্তু তখনও মাঠে ছিলেন এমবাপে। বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্য করে শট মারেন তিনি। বক্সের মধ্যে সেই বল পারেদেসের হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। আরও একবার পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপে। সেই সঙ্গে মেসিকে টপকে বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি ৮ গোল হয়ে যায় তার। কিন্তু তার পরেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারল না ফ্রান্স। টাইব্রেকার থেকে এমবাপে আবার গোল করলেও তার দলের দুই সতীর্থের শট বাঁচিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। শেষ পর্যন্ত চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো ট্রাজিক নায়কে পরিণত হওয়া এমবাপেকে।