ফসলি জমিতে বেড়ে চলেছে তামাক চাষ

লোহাগাড়ায় নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি

| শনিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:১২ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া

লোহাগাড়ায় ফসলি জমিতে দিন দিন বেড়েই চলছে তামাক চাষ। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রলোভনে জীবনের ঝুঁকি জেনেও, তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। ফলে তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। কমে যাচ্ছে ফসল আবাদ।

জানা যায়, ৭ বছর আগেও উপজেলায় কোথাও তামাকের আবাদ হতো না। পরে পার্বত্য বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকটি স্থানে তামাকের চাষাবাদ হতো। বর্তমানে বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও আর্থিক সহায়তায় চরম্বা, পদুয়া, চুনতি ও বড়হাতিয়া ইউনিয়নের একাধিক স্থানে ব্যাপকহারে তামাক চাষ হচ্ছে। এছাড়া তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের তামাক চাষে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে তামাকের বীজ, সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থ প্রদান করছে। শুধু তাই নয়, তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়োগ করা সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। বাজারে তামাকের চাহিদা থাকায় বিক্রিতেও কোন ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না কৃষকদের। কৃষকদের সুবিধার জন্য কোম্পানিগুলো ক্ষেত থেকেই তামাক নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া উৎপাদিত তামাক পাতা পোড়ানোর জন্য করতে তৈরি করা হবে চুল্লী। সেখান্য ব্যবহার করা হবে বনাঞ্চলের কাঠ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা গতো বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, চুনতি ইউনিয়নের সুফিনগর এলাকায় প্রায় ৩০ কানি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গতবছরও ওইসব জমিতে সবজি চাষাবাদ হয়েছিল। তামাক চাষের পাশে সবজি ক্ষেতও দেখা গেছে। সেখানে শাহাদত হোসেন সেকু নামে এক কৃষকের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, সবজি চাষে খরচ বেশি, লাভ কম হওয়ায় অনেক কৃষক তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। কোম্পানির লোকজন তামাক চাষে আর্থিক সহযোগিতা করছে। তামাক পাতা প্রক্রিয়া শেষে নিশ্চিত বিক্রি শেষে লাভবান হওয়া যাবে। তাই অনেকে সবজি ক্ষেত ছেড়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তামাক চাষি জানান, তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করার ফলে ভালো ফলন হয়। তামাক কোম্পানি চাষিদের সহায়তা করে থাকে। আবার বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। অথচ, টমেটো বা সবজির আবাদ বেশি হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিংবা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দাম পাওয়া যায় না। তাই ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকলে এবং চাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা না গেলে কৃষকরা অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হবেন না। তবে একই জমিতে বারবার তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তিও দিন দিন কমে যাচ্ছে। কারণ ভাল মানের তামাক উৎপাদন করতে হলে জমিতে ব্যাপকহারে সারকীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।

লোহাগাড়ার পরিবেশ কর্মী সানজিদা রহমান জানান, তামাক চাষ বন্ধ না হলে উপজেলায় খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কোম্পানিগুলো বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। কৃষি কর্মকর্তাদের উচিত তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে চাষিদের বেশি বেশি সচেতন করা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজি শফিউল ইসলাম জানান, তামাক এমন একটি ফসল যা চাষের কারণে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। একসময় এই জমিতে কোনো ফসল ফলানো যায় না। এখনো পর্যন্ত তামাক চাষ বন্ধে সরকারিভাবে কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে প্রান্তিক কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মূলত চাষিরা সচেতন হলেই বিকল্প ফসল উৎপাদনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তা না হলে দিন দিন আবাদি জমি কমে গেলে নিরাপদ খাদ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজেকে আগুনে পুড়েছে রিসোর্ট ও বসতঘর
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশের টহল ভ্যানে পিকআপের ধাক্কা