ফরাসি সিনেমার আইকন ব্রিজিত বার্দোর চিরবিদায়

| সোমবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ফরাসি চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দো চলে গেলেন পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে। গত শতকের সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রীর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। গতকাল রোববার তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।

১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান’ সিনেমায় খালি পায়ে মাম্বো নাচের দৃশ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান বার্দো। এলোমেলো চুল, দুর্দমনীয় উপস্থিতি আর তীব্র সম্মোহনী শক্তিতে তিনি যৌন আবেদনকে পর্দায় তুলে ধরেন, যেমনটা মূলধারার সিনেমায় আগে খুব কম দেখা গেছে। আর এর মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় এক বৈশ্বিক আইকনের। মাত্র ২১ বছর বয়সে বার্দো ‘সেন্সর’কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দর্শকদের মোহিত করেন। স্বামী রজার ভাদিম পরিচালিত ওই চলচ্চিত্রে তার খোলামেলা, স্বাধীনচেতা অভিনয় আগের যুগের সংযত নারী চরিত্রগুলোর সঙ্গে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে দেয়। ফ্রান্সে তিনি পরিচিত ছিলেন শুধু ‘বি.বি.’ নামে। জীবনের শেষভাগে তিনি প্রাণী অধিকার আন্দোলন এবং কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক অবস্থানের জন্যও আলোচিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্যারিসে জন্ম নেওয়া বার্দো বড় হন এক উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে। ১৫ বছর বয়সেই ‘এল’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় মডেলিং, পরে চলচ্চিত্রে প্রবেশ। ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান’ সিনেমায় বার্দোর চরিত্র ছিল মুক্ত নারীসত্তার প্রতীক। বিতর্কই তার আবেদন আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৫০ ও ৬০এর দশকের ফ্রান্সের প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি। ফরাসি সিনেমার গণ্ডি ছাড়িয়ে তার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। লিঙ্গভিত্তিক প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা বার্দোকে পপ সংস্কৃতির এক আইকনে পরিণত করে। সামাজিক মনোভাব বদলে দেওয়ার এক পরশ পাথর হয়ে ওঠেন তিনি। যতই প্রভাব প্রতিপত্তি থাক, খ্যাতির জীবন বার্দোর কাছে মনে হত নিঃসঙ্গ আর দমবন্ধকর। বার্দো প্রায়ই বলতেন, নিজের খ্যাতির ভেতরে বন্দি হয়ে পড়েছিলেন তিনি। জীবনের স্বাভাবিক, ছোটখাট আনন্দগুলো উপভোগ করার সুযোগও তার হত না।

অভিনয়ের পাশাপাশি সংগীতেও সাফল্য পেয়েছিলেন বার্দো। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে তিনি ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রতীক ‘মারিয়ানে’র আবক্ষ মূর্তির মডেল হন। কিন্তু খ্যাতি আর প্রশংসা তাকে তৃপ্ত করতে পারেনি। ১৯৭৩ সালে নিজের ৪২তম এবং শেষ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন বার্দো। চলচ্চিত্রজগতকে ‘পচে যাওয়া’ আখ্যা দিয়ে তিনি সরে দাঁড়ান।

এরপর তিনি বসবাস শুরু করেন ফরাসি রিসোর্ট সাঁত্রোপেতে। ভূমধ্যসাগর তীরের পরিবেশ আর প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে শান্তি খুঁজে পান। হয়ে ওঠেন প্রাণী কল্যাণের কট্টর প্রচারক। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিজিত বার্দো ফাউন্ডেশন ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব অ্যানিমালস। পরের বছর ব্যক্তিগত স্মারক নিলাম করে তহবিল জোগাড় করেন। জীবনের বড় একটা সময় তিনি সাঁত্রোপেতে উঁচু দেয়ালের আড়ালে একা থেকেছেন; চারপাশে ছিল বিড়াল, কুকুর আর ঘোড়ার দল।

১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ফরাসি আদালত তাকে ছয়বার জরিমানা করে, বিশেষ করে মুসলমানদের নিয়ে মন্তব্যের জন্য। বিতর্ক সত্ত্বেও বার্দোর প্রভাব টিকে ছিল। ফ্যাশনে তার চুলের স্টাইলের পুনরুত্থান, প্রামাণ্যচিত্র ও বইয়ে ফরাসি সিনেমায় তার অনন্য অবদানের উদযাপন তার প্রমাণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটপসয়েল দিয়ে ইট তৈরি, সাতকানিয়ায় দুই ভাটাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধকুয়াশার দাপটে শীত কমেনি, আসছে শৈত্যপ্রবাহ