ফটিকছড়িতে অস্তিত্ব বিপন্নের পথে হালদা নদী!

অবাধে নদীর পাড় কাটা ও বালু উত্তোলন

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | বৃহস্পতিবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

হালদা নদী চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা থেকে উৎপন্ন হয়ে ফটিকছড়ি উপজেলায় প্রবেশ করে এবং উপজেলাটির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। দেশের একমাত্র মৎস প্রজনন কেন্দ্র খ্যাত এ গুরুত্বপূর্ণ অংশ রক্ষার জন্য নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। প্রতিনিয়ত চলছে হালদা নদীর পাড় কেটে এবং নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এ যেন নদীটি ধ্বংস করার প্রতিযোগিতা মাটি খেকোদের!

স্থানীয় কতিপয় মাটি ও বালু খেকোদের থাবায় নদীর গভীরতা কমে গেছে, যা নদীর জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ঝুঁকি। নদীটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে, হালদার তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটাগুলো শুধু দূষণই ছড়াচ্ছে না, বরং ভেকু দিয়ে পাড় কেটে মাটিও নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার পাইন্দং ইউপির ১নং ওয়ার্ডের মাদার্শার বাড়ি পূর্ব পাশে সরেজমিনে হালদা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড় কেটে ড্রাম ট্রাকে মাটি পাচার করা হচ্ছে অন্যদিকে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর পাড় এমন ভাবে কাটা হচ্ছে বুঝার উপায় নেই যে এটি হালদা নদী। নদীর অনেকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে গতিপথও পাল্টে দিয়েছে মাটি খেকোরা। গত কয়েক মাসে এভাবে মাটি কাটার ফলে হালদার পাড় পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে। নদী পাড়ের মাটি কাটার শ্রমিক এবং ট্রাক ড্রাইভারদের কাছে ‘কারা এসব কাজ করছে’ জানতে চাইলেতারা তা কিছু না বলে তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বিচারে নদীর পাড় কাটার ফলে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে। গ্রামীণ সড়কে রাতদিন বালু এবং মাটির ট্রাক চলার কারণে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুলাবালুতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বাসিন্দাদের জীবন।

স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে বালু মিশ্রিত এসব মাটির চাহিদা থাকায় তা চড়া দামে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এ নদী রক্ষায় অবৈধ খনন ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ও সুরক্ষা দিতে টেকসই পরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে নদী রক্ষা করা প্রয়োজন। শুষ্ক মৌসুমে নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায় সেচ সংকট দেখা দেয় এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদী ও কৃষকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। নদীর পাড় কাটলে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।

পাইন্দং ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি এরশাদ উল্লাহ বলেন, পাইন্দংয়ে নির্বিচারে মাটি কাটা ও বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আমাদের রাজনৈতিক দলের তো কোনো ক্ষমতা নেই এসব বন্ধ করার। আমাদের দলের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি এসব অবৈধ কাজ করে থাকে তাহলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কোঅর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় সম্পদে সমৃদ্ধ হালদা হুমকির মুখে পড়বে। এ কাজ বন্ধে আমি জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করবো।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, কোনো অবস্থাতেই হালদার পাড় কাটা কিংবা এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। যারা এ কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে নদী সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, হালদা নদী ফটিকছড়ি উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক অংশ, যা এই এলাকার ভূপ্রকৃতি, কৃষি ও জনজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদীর্ঘ নির্বাসন জীবন শেষে স্বদেশে তারেক রহমান
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে মহিলা মেম্বার আটক