চট্টগ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২–এর আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। নিয়মিত লোডশেডিং, কর্মী সংকট, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষোভ প্রতিদিনই বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ঘাটতি, দক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাব, এবং সমন্বয়হীনতা। বিশেষ করে হাটহাজারী গ্রিড ও চারিয়া সুইচিং স্টেশনের রেড–হট সমস্যা বারবার বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই সংকট নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে গ্রিডে নিয়মিত সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু দ্রুত সমাধান দেওয়ার মতো দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই। বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন জনগণের জন্য বড় দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। ফটিকছড়ি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ এর ডিজিএম আবুল বাশার শামসুদ্দিন আহমদ জানান, “অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানদের একযোগে বদলির কারণে পুরো কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে।”
এজিএম রায়হানুল ইসলাম আরও জানান, “বর্তমানে যারা আছেন, তারা নতুন এবং অভিজ্ঞতার অভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।” খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাব–স্টেশন ঘিরে থাকা লাইনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। অফিসে লাইনম্যান, মোটরসাইকেল বা অন্যান্য জরুরি সরঞ্জামের অভাব প্রকট। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকলেও তাদের সহায়তার জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত লোডের প্রতিটি ভবনে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ১৫% সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সরবরাহ বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো অগ্রগতি। অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রভাবশালী দালালচক্র এই কার্যক্রমের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফলে সরকার ঘোষিত পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নীতিমালাও ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এনার্জি এন্ড মিনারেল রিসার্চেরনোবিলে আইনজীবী ফরমানুল ইসলাম জানান, “ফটিকছড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়টি মাননীয় বিদ্যুৎ উপদেষ্টার দৃষ্টিগোচর হলে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে রিপোর্ট দিতে বলেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।” স্থানীয়রা বলছেন, সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের হলেও এখনো স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। বরং দিনের পর দিন সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ফিরিয়ে আনা এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহ না হলে ফটিকছড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।